ফারদিনের মৃত্যু: ‍বুশরার জামিন শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষা

মামলার তদন্তকারী সংস্থাটি গোয়েন্দা পুলিশ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা করেছিলেন। আর তার মৃত্যুর সঙ্গে বুশরার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা নেই’।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2023, 09:02 AM
Updated : 5 Jan 2023, 09:02 AM

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় তার বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে রোববার আদেশের জন্য রেখেছে আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখারের আদালতে বুশরার জামিন শুনানি হয়। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল।

ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা এবং বুশরার চাচা মাজহারুল ইসলামও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। তার পক্ষে আইনজীবী মো. শামীম হাসান জামিনের বিরোধিতা করে যুক্তি দেন। এছাড়া আদালত পুলিশের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ছিলেন শুনানিতে। 

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১৬ নভেম্বর বুশরার জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছিল আদালত। ৫ ডিসেম্বর হাকিম আদালতে বুশরার জামিন আবেদন আবারও খারিজ হলে তিনি জজ আদালতে আবেদন করেন।

Also Read: ফারদিনের মৃত্যু: পুলিশ প্রতিবেদনে আটকে বুশরার মুক্তি

Also Read: ফারদিনের বন্ধু বুশরা ‘জড়িত নয়’ জানিয়ে প্রতিবেদন দেবে ডিবি

মামলার তদন্তকারী সংস্থাটি গোয়েন্দা পুলিশ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা করেছিলেন। আর তার মৃত্যুর সঙ্গে বুশরার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’। সুতরাং আদালতে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

সে কথা তুলে ধরে মোখলেসুর রহমান বাদল জামিন শুনানিতে বলেন, “ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছে, কিন্তু বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি। ফারদিন যখন বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে আসে, তারপর সে অন্যত্র গিয়ে আত্মহত্যা করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তদন্ত সংস্থা এগুলো আগেই জানিয়েছে।

“বুশরাকে কয়েক দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা বাদ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে যেসব মেসেজ আদান প্রদান করা হয়েছে, তা থেকেও বুশরার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেসব আলামত এসেছে তা আত্মহত্যার।”

এ আইনজীবী বলেন, “আমরা বুশরার জন্য মানবিক কারণে এসেছি। আ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পর্যন্ত বলেছে এই মেয়ের কেন জামিন হয় না। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বুশরার মুক্তির জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছে।”

বিচারক তেহসিন ইফতেখার আসামিপক্ষের আইনজীবীদের প্রশ্ন করেন, তারা কেন হাই কোর্টে যাচ্ছেন না।

উত্তরে আইনজীবী বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালত না হয়ে হাই কোর্টে যাওয়া যায় না। 

বুশরার পক্ষে শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষে আদালত পুলিশের এসআই মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা না আত্মহত্যা– সে তথ্য পাওয়া যাবে। এখন জামিনের বিষয় বিবেচনা করা ঠিক হবে না।”

ফারদিনের বাবার আইনজীবী মো. শামীম হাসানও বুশরার জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।

এজলাসে উপস্থিত ফারদিনের বাবা শুনানিতে কোনো কথা বলেননি। বুশরার চাচা মাজহারুল ইসলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনানি শুনছিলেন।

শুনানির পর মোখলেসুর রহমান বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত শুনানি নিয়েছেন, আদেশ পরে দেবেন জানিয়েছেন।”

পরে আদালত রোববার আদেশ দেবে বলে জানায়। 

Also Read: ফারদিন হত্যা: বুশরা রিমান্ডে

Also Read: ফারদিন হত্যা: রিমান্ড শেষে জামিন মেলেনি বুশরার

২৪ বছর বয়সী ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন ফারদিন।

আর তার বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরা পড়েন ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় মেসে থাকতেন তিনি।

বছর পাঁচেক আগে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফারদিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা জানিয়েছিলেন।

গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করেছিল নৌ-পুলিশ৷

আর ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে সর্বশেষ রামপুরা এলাকায় বুশরার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। সে কারণে রামপুরা থানাতেই একটি জিডি করেছিলেন ফারদিনের বাবা।

ছেলের লাশ পাওয়ার দুদিন পর ১০ নভেম্বর ভোরে তিনি রামপুরা থানাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে বুশরাকেই একমাত্র আসামি করা হয়।

পরে ওইদিনই বুশরাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেওয়া হলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছিল আদালত। রিমান্ড শেষে আবারও তাকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আতাউল্লাহ তাকে কারাগারে রাখার আদেশ দেন।

শীতলক্ষ্যা থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধারের ৪০ দিন পর গত ১৪ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব উভয়ের তরফেই সাংবাদিকদের জানানো হয়, এই তরুণ সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

তারপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেনি তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।

Also Read: ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা: ডিবি-র‌্যাব

Also Read: ‘আত্মহত্যা’ মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা; বললেন, ‘গল্প শুনতে হল’

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ গত ৩০ ডিসেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না তারা।

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান অবশ্য বলেছিলেন, ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন তারা ডিবির কাছে জমা দিয়েছেন। ভিসেরা প্রতিবেদনে কোনো রাসায়নিক বা বিষাক্ত কিছু পাওয়া যায়নি।