তদন্তে বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সঙ্গে বুশরার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 15 Dec 2022, 11:20 PM
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা তার বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি গোয়েন্দা পুলিশ; যে কারনে ‘জড়িত নয়’ জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে তদন্তকারী সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার ফারদিনের সহপাঠীদের সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনার পর এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মো. হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় ফারদিনের বাবার দায়ের করা মামলায় বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্তে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি।
"তার যে সংশ্লিষ্টতা নেই বিষয়টি আমরা নিয়ম অনুযায়ী আদালতকে জানিয়ে প্রতিবেদন দেব। পরে তার মুক্তির বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।”
আলোচিত এ মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় ৩৯ দিন তদন্ত করে ‘ফারদিন ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করেছে’ বলে বুধবার মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ জানিয়েছিল। মামলাটির ছায়া তদন্তে থাকা র্যাবও পরে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে একই কথা বলে।
২৪ বছর বয়সী ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন ফারদিন।
আর তার বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরা পড়েন ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় মেসে থাকতেন তিনি।
বছর পাঁচেক আগে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফারদিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা জানিয়েছিলেন।
গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করেছিল নৌ-পুলিশ৷
ফারদিন হত্যা: বুশরা রিমান্ডে
ফারদিন হত্যা: রিমান্ড শেষে জামিন মেলেনি বুশরার
আর ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে সর্বশেষ রামপুরা এলাকায় বুশরার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। সে কারণে রামপুরা থানাতেই একটি জিডি করেছিলেন ফারদিনের বাবা।
ছেলের লাশ পাওয়ার দুদিন পর ১০ ডিসেম্বর ভোরে তিনি রামপুরা থানাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে বুশরাকেই একমাত্র আসামি করা হয়।
পরে ওইদিনই বুশরাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেওয়া হলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছিল আদালত।
রিমান্ড শেষে আবারও তাকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আতাউল্লাহ তাকে কারাগারে রাখার আদেশ দেন।
এদিকে মামলায় বুশরার কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ডিবি প্রধান হারুন ‘নিয়ম অনুযায়ী’ প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করলেন।
এর আগে বুধবার ফারদিন ‘ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করেছে’ বলে জানায় ডিবি ও র্যাব।
বিষয়টি ফারদিনের সহপাঠীরা তদন্তকারী সংস্থার এ বক্তব্য ‘বিশ্বাস’ করতে না পারায় বৃহস্পতিবার তারা ডিবি কার্যালয়ে যান।
সেখানে কয়েক ঘণ্টা আলোচনার পর ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে যে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেছে তাতে তারা ‘অনেকটা সন্তুষ্ট’ বলে সংবাদ মাধ্যমকে অবহিত করেন।
এ বিষয়ে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, পুরো বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তারা বুঝেছে এবং সন্তুষ্ট হয়েছে।"
ফারদিনের পরিবারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে ছেলে আত্মহত্যা করেছে, তা মানতে এখনও নারাজ ফারদিনের বাবা নূরউদ্দিন রানা। গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব যে তথ্য প্রমাণ দেখিয়েছে, তা সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাকে।
ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
আরও পড়ুন:
ফারদিন খুন: বুশরা নিরাপরাধ, বলছেন চাচা
ফারদিনের মৃত্যু: ডিবির সঙ্গে বৈঠকে ‘অনেকটা সন্তুষ্ট’ সহপাঠীরা
‘আত্মহত্যা’ মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা; বললেন, ‘গল্প শুনতে হল’