গ্রেপ্তার আরেকজন জামিনের আবেদন করেননি।
Published : 21 Jun 2023, 08:25 PM
‘গাফিলতিতে’ নবজাতকের মৃত্যুর মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের এক চিকিৎসকের জামিন আবেদন আবারও নাকচ করেছে আদালত।
বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে ডা. মুনা সাহার জামিন আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করেননি বিচারক।
এদিন কারাগারে থাকা অপর চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়নি।
ঢাকার গ্রিন রোডের এ হাসপাতালে কুমিল্লা থেকে আসা মাহবুবা রহমান আঁখি নামের এক প্রসূতির অস্ত্রোপচারের সময় তার নবজাতক মারা যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় ওই নারীকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তির পরে তারও মৃত্যু হয়।
নবজাতকের মৃত্যুর পর গত বুধবার রাতে ওই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার পরদিন আলাদতে তোলা হয়। সেদিনও আদালত তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। এরপর মুনা সাহা ও অপর চিকিৎসক শাহজাদী স্বেচ্ছায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বুধবার জামিন আবেদনের শুনানিতে ডা. মুনা সাহার আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ ও ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া জোবায়ের বলেন, ঘটনাটি ‘মিডিয়া ট্রায়ালে’ চলে গেছে। এই চিকিৎসক এক সপ্তাহ ধরে কারাগারে রয়েছেন। মামলার ধারা জামিনযোগ্য। সুতরাং তাদের জামিন দেওয়া হোক।
এর বিরোধিতা করে আদালতে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক
মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রোপচার করার মতো ওই চিকিৎসকের দক্ষতা বা যোগ্যতা কোনটাই ছিল না। চিকিৎসা শাস্ত্রে তাদের কোনো উচ্চতর বিশেষায়িত ডিগ্রিও নেই। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে তিনি এবং অপর চিকিৎসক শাহজাদী যা বলেছেন তা বিশ্লেষণ করলে দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারার অবহেলার জামিন যোগ্য ধারা আসে না, আসে ৩০৪ ধারা। অর্থাৎ অপরাধজনক প্রাণনাশের অভিযোগ।
শুনানি শেষে বিচারক অভিযুক্তের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত বুধবার (১৪ জুন) আঁখির স্বামী মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করেন।
যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চিকিৎসক মুনা, শাহজাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ।
ইয়াকুব আলীর অভিযোগ, সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতির বিষয়টি না জানিয়েই সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করে। সেখানে ‘গাফিলতির’ কারণে তার সন্তানের মৃত্যু হয়, তার স্ত্রীকে আশংকাজনক অবস্থায় অন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি সন্তানের মৃত্যুর চারদিনেও তার লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মাহাবুবা রহমান আঁখি গর্ভধারণের পর থেকেই সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ৯ জুন তার প্রসব বেদনা উঠলে ইয়াকুব আলী রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংযুক্তা সাহার সহকারী জমিরেরর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানতে চান ওই চিকিৎসক হাসপাতালে আছেন কি না। জমির তাকে বলেন, ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালেই আছেন, ইয়াকুব যেন দ্রুত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন।
সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে পৌঁছান ইয়াকুব এবং ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
পরে তার স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়, যা তার কাছে দীর্ঘ সময় গোপন রাখা হয়।
ঘটনার পরিক্রমায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের সহযোগিতা না পেয়ে ইয়াকুব স্ত্রীকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১০ জুন বিকেল ৪টার দিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, এনআইসিইউতে তার নবজাতক সন্তান মারা গেছে। পরে তার স্ত্রী রোববার দুপুরে মারা যান।
নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হসপিটালের দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার
নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কারাগারে
নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর দায় হাসপাতালের: সংযুক্তা সাহা
বাবার কবরের পাশে সন্তানসহ শায়িত আঁখি
আঁখির মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে, বলছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
আঁখির চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল, স্বীকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন
‘ভালো’ চিকিৎসা নিতে এসে হারালেন সন্তান, নিজেও সিসিইউতে
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব অস্ত্রোপচার বন্ধ
সোশাল মিডিয়ায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রচারে মানা
পসার বাড়াতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারে চিকিৎসকরা, কতটা নীতিসিদ্ধ?