"পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আঁখির মরদেহ থেকে নমুনা রাখা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট এলে পূর্ণ প্রতিবেদন দেওয়া হবে," বলেন ডা. মোখলেসুর রহমান।
Published : 19 Jun 2023, 08:19 PM
সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় গুরুতর অসুস্থ প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কথা জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর রহমান।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আঁখির মরদেহ থেকে নমুনা রাখা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট এলে পূর্ণ প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এদিন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসদের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা মাহবুবা রহমান আঁখি এবং তার নবজাতক সন্তানের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। দুপুর দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করেন অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর।
পরে আঁখির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। তবে পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য মৃতদেহ থেকে বিভিন্ন অর্গান রাখা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট আসলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।”
আঁখির চাচাতো ভাই শাখাওয়াত হোসেন শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল পাঁচটার দিকে মরদেহ দুটি নিয়ে আঁখির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে যাবেন। সেখানে তার বাবার কবরের পাশে তাদের দুজনের দাফন হবে।
রোববার ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুমিল্লার তরুনী মাহবুবা আক্তার আঁখি। যিনি স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে ৯ জুন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসেছিলেন। হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।
সেদিন ওই চিকিৎসক না থাকায় তার সহকারী আঁখির স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করেন। পরে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন বিকেলে আঁখির নবজাতক মারা যায়।
এ ঘটনায় গত বুধবার ধানমণ্ডি থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। ওইদিনই তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত।
শুক্রবার ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে ওই হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার বিশেষজ্ঞ সেবা দেওয়া বন্ধের নির্দেশও দেয় অধিদপ্তর।
এদিকে সোমবার আঁখির মৃত্যুতে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তার চিকিৎসায় ‘অবহেলা’ হয়েছিল।
আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে সোমবার ঢাকার গ্রিনরোড এলাকার নামি এ হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই স্বীকারোক্তি আসে।
এদিন হাসপাতালের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এর জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক চিকিৎসক এটিএম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল।”
কী গাফিলতি ছিল, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, “গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের। কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেনি।”
এই ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সাত কর্ম দিবসের মধ্যে এর তদন্ত প্রতিবেদন আসার কথা। ইতোমধ্যে পাঁচ দিন চলে গেছে, আর বাকি আছে দুই দিন। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।”
আঁখির চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল, স্বীকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের
পসার বাড়াতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারে চিকিৎসকরা, কতটা নীতিসিদ্ধ?
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন
আঁখি এখন সন্তানের পাশে, দেখা হল না দুজনার
প্রসূতি আঁখির মৃত্যু দুঃখজনক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী