তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Published : 15 Jun 2023, 10:44 PM
অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্ম দিতে চেয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মাহবুবা রহমান আঁখি। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে নিয়মিত ওই চিকিৎসকের পরামর্শেই চলতেন তিনি।
প্রসবব্যথা উঠলে গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন আঁখি। প্রসূতি ও তার পরিবারকে বলা হয়েছিল ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে আছেন। কিন্তু সেদিন হাসপাতালে চিকিৎসক সংযুক্তা ছিলেন না, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করায় ওই চিকিৎসকের সহকারীরা। জন্মের পর মারা যায় নবজাতক। আর আঁখিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে বুধবার ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেছেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। সেদিন রাতেই গ্রেপ্তার ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহার জামিন আবেদন নাকচ করে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ইয়াকুব আলী সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন বছর আগের তাদের বিয়ে হয়। স্ত্রী লেখাপড়া-ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বাচ্চা নিতে একটু দেরি করেছেন।
“স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করবে, সিজার করাবে না। আমরা সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি তিনি (সংযুক্তা সাহা) ভালো চিকিৎসক। এভাবে জানতে পেরেই আমরা এখানে এসেছি। তিনি নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, নিয়মিত ফলোআপে এসেছি।”
সুমন জানান, তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে গত শুক্রবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে যোগাযোগ করে ডা. সংযুক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেন। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে ডা. সংযুক্তা আছেন। আঁখিকে নিয়ে কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে পৌঁছান।
মামলার বাদী সুমন বলেন, “ওই সময় ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে ছিলেন না। তিনি ১০টার দিকে চলে যান। ওই তথ্যটি জানানো হয়নি।
“তিনি চলে গেছেন সেটা সমস্যা না, তারা আমাদের জানাবে না যে তিনি চলে গেছেন। বলবেন না যে আপনার ডক্টর নাই। আমাকে বলেছে, তিনি আছেন। আছে বলে আমার কাছ থেকে এডমিশন ফি নিয়েছে, ভর্তি করেছে।”
সুমনের ভাষ্য, রাত পৌনে ১টার দিকে আঁখিকে স্বাভাবিক ডেলিভারির চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু না পেরে সিজারিয়ান অপারেশন করান।
“ভর্তির পর আমাকে না জানিয়ে তাকে লেবার রুমে নিয়ে গেছে। লেবার রুমে তাকে নরমালে ট্রাই করেছে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর তারা সাইট কাটেন। এটা করতে গিয়ে আঁখির মূত্রনালী ও মলদ্বার কেটে ফেলে তারা। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়, সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এই পুরো কাজটাই করেছে আমার অনুমতি ছাড়া, এটা পৃথিবীর কোথাও হয়?”
সিজারের মাধ্যমে বাচ্চার জন্ম হয় উল্লেখ করে সুমন বলেন, “কিন্তু বাচ্চার অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বাচ্চাটা মারা যায়। স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় ল্যাবএইড হাসপাতালে।”
আঁখি বর্তমানে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ডা. সোহরাব উজ জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন।
আঁখির বিষয়ে এই চিকিৎসকের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে তার স্বামী সুমন বলেন, “ডাক্তার আমাদের বলেছেন, ‘তার অবস্থা ভালো না’। বলেছেন, ‘আল্লাহকে ডাকেন’।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার মোবাইল কল দিলেও তিনি ধরেননি। একজন নারী কল রিসিভ করে বলেন, “আমি ম্যাডামের চেম্বারের সহকারী বলছি। ম্যাডাম বাসায় খেতে গেছেন, মোবাইল চেম্বারে রেখে গেছেন।”
সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই রোগী এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। পুলিশ বলেছে, ‘এটা জুডিসিয়াল, এজন্য আপনারা কোনো স্টেটমেন্ট দিবেন না।’ এজন্য বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না। আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি।
“আমরা কয়েকজন প্রফেসরকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা কাল (বুধবার) ইন্টারোগেশন করেছে। আজ রিপোর্ট লিখবে। তারা আমাদের রিপোর্ট দিবে, এরপর আমরা কী করব- সেটা ডিসিশন নিব। যারা এটা করেছে, তাদের আমরা রাখব না। তাদের শাস্তি হবে।”
অভিযোগ ওঠা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. লিয়াকত আলী বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনায় এখনও কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি।
“কেউ বিএমডিসিতে লিখিত অভিযোগ করলে আমরা সেটা যাচাই করি। অভিযোগটা আমলে নেওয়ার মতো হলে সেটা আমাদের ডিসিপ্লিনারি কমিটির মিটিংয়ে তুলি। অভিযুক্ত চিকিৎসকের ব্যাপারে তদন্ত হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য তার সার্টিফিকেট স্থগিত করা হয়।”