ইডেন ছাত্রী আঁখি অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তানের জন্ম দেওয়ার আশায় গিয়েছিলেন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে।
Published : 18 Jun 2023, 02:48 PM
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতক শিশুকে হারানো মা মাহবুবা রহমান আঁখিকেও বাঁচানো গেল না।
রোববার বেলা আড়াইটার কিছু আগে ল্যাবএ্ইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “একটু আগে আঁখি মারা গেছে। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।”
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন অফিসার চৌধুরী মেহের-এ-খোদা সাংবাদিকদের বলেন, গত ১০ জুন বেলা পৌনে ৪টার দিকে ২৫ বছর বয়সী আঁখিকে অচেতন অবস্থায় ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর আগে প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল আঁখির, তার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছিল।
“ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে লাইফ সাপোর্টে রেখে আঁখিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১২ জুন একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। রোগীর ইউরিন আউটপুট বন্ধ থাকায় ডায়ালাইসিসও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, আজ দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।”
অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্ম দিতে নিজের ইচ্ছের কথা স্বামীকে জানিয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মাহবুবা রহমান আঁখি। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে নিয়মিত ওই চিকিৎসকের কাছেই তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রসবব্যথা উঠলে গত ৯ জুন মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখিকে নিয়ে আসেন তার পরিবার।
ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, সেদিন তাদের বলা হয়েছিল ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে আছেন। কিন্তু সেদিন ওই চিকিৎসকের সহকারীরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। সে সময় জটিলতা তৈরি হলে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটি ওইদিনই মারা যায়। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আঁখিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। ল্যাবএইডে ভর্তির পরও আঁখির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না বলে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব অস্ত্রোপচার বন্ধ
‘ভালো’ চিকিৎসা নিতে এসে হারালেন সন্তান, নিজেও সিসিইউতে
ওই ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে বুধবার ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন ইয়াকুব। সেই মামলায় ডা. সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ। পরে তাদের কারাগারে পাঠায় আদালত।
এছাড়া ওই দুই চিকিৎসক-কর্মচারীসহ ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আইসিইউ ও জরুরী সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম শুক্রবার বন্ধ করে দিয়েছে।
ওই হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ওই হাসপাতালে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলে নির্দেশনা এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
আঁখির চাচাতো ভাই শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববারই আঁখির মরদেহ কুমিল্লায় নিয়ে যাবেন তারা।
“লাকসামে আমাদের বাড়িতে দাফন করা হবে। আঁখিকে আট মাসের রেখে আমার চাচা মারা গিয়েছিলেন। চাচী আর বিয়ে করেননি, সে আমাদের সবার খুব আদরের ছিল।”