মায়ের অবস্থাও ভালো নয়, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে রাখা হয়েছে।
Published : 15 Jun 2023, 04:22 PM
ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের ‘গাফিলতিতে’ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ধানমণ্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম জানান, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় হাসপাতালের ডা. মুনা ও ডা. শাহাজাদীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক আবুল কাশেম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওরা অ্যারেস্ট হয়েছে। তাদের দুজনকে কাল রাতেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। আজ কোর্টে চালান দিয়েছে।”
সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে বলা হয়, মাহবুবা রহমান আঁখি নামের ২৫ বছর বয়সী এক নারী সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার ভিডিও পরামর্শ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক প্রসবের আশায় গ্রিনরোডের ওই হাসপাতালে যান।
হাসপাতালে তাকে সেই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হলেও ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচর করে বাচ্চা বের করা হয়। পরদিন মারা যায় শিশুটি।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবা রহমান আঁখির অবস্থাও ভালো নয়। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তিনি আছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে।
আঁখির স্বামী মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করেছেন।
যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চিকিৎসক মুনা, শাহজাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ।
ইয়াকুব আলীর অভিযোগ, সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতির বিষয়টি না জানিয়েই সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করে। সেখানে ‘গাফিলতির’ কারণে তার সন্তানের মৃত্যু হয়, তার স্ত্রীকে আশংকাজনক অবস্থায় অন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি সন্তানের মৃত্যুর চারদিনেও তার লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মাহাবুবা রহমান আঁখি গর্ভধারণের পর থেকেই সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৯ জুন তার প্রসব বেদনা উঠলে ইয়াকুব আলী রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংযুক্তা সাহার সহকারী জমিরেরর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানতে চান ওই চিকিৎসক হাসপাতালে আছেন কি না। জমির তাকেবলেন, ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালেই আছেন, ইয়াকুব যেন দ্রুত স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন।
সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে পৌঁছান ইয়াকুব। সংযুক্তা সাহার চেম্বারের সামনে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর ডা. মুনাসহ হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী প্রসূতিকে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। ডা. সংযুক্তা সাহা লেবার ওয়ার্ডে রয়েছেন বলে সে সময় ইয়াকুবকে জানানো হয়।
লেবার ওয়ার্ডে নেওয়ার পর ভেতর থেকে একজন নার্স বের হয়ে আঁখিকে ভর্তি করাতে বলেন। তখনি ইয়াকুব হাসপাতালের কাউন্টারে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সংযুক্তা সাহার অধীনে মাহাবুবাকে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করেন।
ভর্তি শেষে লেবার ওয়ার্ডে ফিরে ইয়াকুব স্ত্রীর অবস্থা জানতে চান, সংযুক্তা সাহার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা গড়িমসি করতে থাকে বলে তার ভাষ্য।
এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ইয়কুব রাত সোয়া ১টার দিকে জোর করে লেবার ওয়ার্ডে ঢুকে দেখতে পান, কয়েকজন নার্স মিলে তার স্ত্রী আঁখিকে হাঁটাচ্ছেন। ইয়াকুব জানতে চান, ডা. সংযুক্তা সাহা কোথায়। নার্সরা প্রশ্ন এড়িয়ে তাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন।
বাদী মামলায় বলেছেন, রাত আড়াইটার দিকে ডা. শাহজাদী লেবার ওয়ার্ড থেকে বের করে মাহাবুবাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। ডা. এহসানও ওটিতে ঢোকেন। পরে ডা. শাহজাদী সিজারিয়ান অপারেশন শেষ করে নবজাতককে জীবিত অবস্থায় হাসপাতালের এনআইসিইউতে নিয়ে যান। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ওটি থেকে নার্স বের হয়ে জানান, আঁখির অবস্থা আশংকাজনক।
এজাহারে বলা গয়, সেই নার্স কিছু কাগজপত্র এনে তাতে স্বাক্ষর করতে বলেন ইয়াকুবকে। তা না হলে তার স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা দেওয়া হবে না বলে জানান। ইয়াকুব ওইসব কাগজে স্বাক্ষর করেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে তার স্ত্রীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
ইয়াকুব বলছেন, ওই সময় তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার মাসুদ পারভেজকে মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানান। পরে তিনি স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতাল থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে মাহাবুবাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বলে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের সহযোগিতা না পেয়ে ইয়াকুব স্ত্রীকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১০ জুন বিকেল ৪টার দিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, এনআইসিইউতে তার নবজাতক সন্তান মারা গেছে।
এসব বিষয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।