“গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের। কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেনি।”
Published : 19 Jun 2023, 03:37 PM
কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এসে নবজাতক হারানোর পর মা মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুতে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তার চিকিৎসায় ‘অবহেলা’ হয়েছিল।
আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে সোমবার ঢাকার গ্রিনরোড এলাকার নামি এ হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই স্বীকারোক্তি এল।
এদিন হাসপাতালের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এর জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক চিকিৎসক এটিএম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল।”
কী গাফিলতি ছিল, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, “গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের। কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেনি।”
এই ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সাত কর্ম দিবসের মধ্যে এর তদন্ত প্রতিবেদন আসার কথা। ইতোমধ্যে পাঁচ দিন চলে গেছে, আর বাকি আছে দুই দিন। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।”
যা যা হয়েছে
অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান জন্ম দিতে নিজের ইচ্ছের কথা স্বামীকে জানিয়েছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আঁখি। সেজন্য গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা সাহার চিকিৎসা নেন তিনি।
প্রসবব্যথা উঠলে গত ৯ জুন মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আঁখিকে নিয়ে আসেন তার পরিবার। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলীর ভাষ্য, প্রসূতিকে ভর্তির সময় চিকিৎসক সংযুক্তা হাসপাতালেই আছেন বলা হলেও আসলে তিনি ছিলেন না।
সেই রাতে ওই চিকিৎসকের সহকারীরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করেন। সে সময় জটিলতা তৈরি হলে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুটি ওইদিনই মারা যায়।
সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আঁখিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুরে কিছু আগে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনলাইনে কোনো ধরনের প্রচারে এসেছে নিষেধাজ্ঞা।
গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ওই হাসপাতালে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটা প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল ওই হাসপাতালে। কোথায় অপারেশন হয়েছিল, তাদের আইসিইউ ছিল না কি না- সেটাও তারা দেখেছে।
অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ ‘মানসম্মত না হওয়ায়’ তাদের সব অপারেশন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে ইতোমধ্যে ধানমণ্ডি থানায় মামলাও করেছেন আঁখির স্বামী। সংযুক্তা সাহার দুই সহযোগী চিকিৎসক শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে ওই মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ব্যাপারটি আইনি কাঠামোর মধ্যে চলে গেছে, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- হচ্ছেও তাই। যারা ওখানে ওই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা জেলহাজতে আছে।”
মেলেনি সব অভিযোগের জবাব
আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যুর পর সেন্ট্রাল হসপিটালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে যত অভিযোগ উঠে, সেগুলোর বিষয়েও সাংবাদিকরা প্রশ্ন রাখেন হাসপাতালটির জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক চিকিৎসক এটিএম নজরুল ইসলামের কাছে।
এ হাসপাতালে একজন চিকিৎসক প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ জন রোগী দেখেন বলে তথ্য মিলেছে। একজন চিকিৎসক এত বেশি রোগী দেখলে ভালো চিকিৎসা আসলে সম্ভব কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে গেলে একজন চিকিৎসকের দৈনিক এত রোগী দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু সংযুক্তা সাহা দেখতেন, কী বলব আর এটি নিয়ে।”
সংযুক্তা সাহার বিষয়টি হাসপাতাল জানত কি না এমন প্রশ্নে নজরুল বলেন, এ বিষয়ে তার ‘জানা নেই’।
“ডাক্তারের কাছে এলে চিকিৎসা তো মূলত তারাই দেয়। তারপর কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই সেটা আমাদের কাছে আসে। বাইরে বিষয়গুলোতে আমাদের অবগত করা হয় না। এজন্যই আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পারিনি”, বলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সন্তান হারানো আঁখিও চলে গেলেন
‘ভালো’ চিকিৎসা নিতে এসে হারালেন সন্তান, নিজেও সিসিইউতে
নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কারাগারে
সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব অস্ত্রোপচার বন্ধ
সোশাল মিডিয়ায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রচারে মানা
পসার বাড়াতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারে চিকিৎসকরা, কতটা নীতিসিদ্ধ?