কারিগরি সদস্যদের নিয়ে গঠিত এ টিম সাইবার হামলা হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা যেমন নেবে, তেমনি সাইবার হামলা রোধেরও উদ্যোগ নেবে।
Published : 11 Aug 2023, 12:03 PM
লাখো নাগরিকের তথ্য ফাঁসের পর সেবাগ্রহীতা সংস্থাগুলোকে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি তথ্যভাণ্ডারের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজস্ব জনবল দিয়ে ‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন।
কারিগরি সদস্যদের নিয়ে গঠিত এ টিম সাইবার হামলা হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা যেমন নেবে, তেমনি সাইবার হামলা রোধেরও উদ্যোগ নেবে।
এনআইডি উইংয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে আহ্বায়ক করে ছয় জন সদস্য এবং একজন সদস্য সচিব নিয়ে আট জনের এই ‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ গঠন করে বৃহস্পতিবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিবকে বিষয়টি অবহিত করেছে ইসি সচিবালয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে বাংলাদেশের সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয় গত ৬ জুলাই। এরপর নির্বাচন কমিশনের সংরক্ষিত জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর হয় নির্বাচন কমিশন।
৯ জুলাই সাংবিধানিক সংস্থাটির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ‘অনলাইনে এনআইডি সংক্রান্ত অবৈধ অ্যাপ/সফটওয়ার ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও মনিটরিং’ কমিটির সভা করে।
এরপর ১৩ জুলাই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা/বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। ওই সভায় ইসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ১৭১টি পার্টনার সার্ভিস অর্গানাইজেশনের কার্যক্রম তদারকি ও আইটি অডিটের পরামর্শ আসে। নিজস্ব কারিগরি দক্ষ জনবল নিয়ে আলাদা ইউনিট করারও সুপারিশ রাখেন বিশেষজ্ঞরা।
পাশাপাশি সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়। নাগরকিদের তথ্য ফাঁসের বিষয়ে ১১ জুলাই সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালককে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরইমধ্যে ১৫ অগাস্ট সামনে রেখে ৩১ জুলাই একটি ‘উগ্রপন্থি’ হ্যাকার গ্রুপের তরফ থেকে বাংলাদেশে সাইবার হামলার হুমকি আসে। সেজন্য ৪ অগাস্ট সতর্কতা জারি করে সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট)।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিতে ইসির কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হল।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বৃহস্পতিবার বলেন, “ইসির তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষিত। এরপরও এনআইডি উইংয়ের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে সেবাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখন ইসির এনআইডি উইংয়ের লোকবল নিয়ে একটি টিম করে দেওয়া হয়েছে।
“আগেও মনিটরিং করা হত। এখন কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম নামে একটা বিশেষ টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।”
বর্তমানে ইসির জাতীয় এ তথ্যভাণ্ডারে প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের ছবি, দশ আঙ্গুলের ছাপ, আইরিশের প্রতিচ্ছবিসহ নানা ধরনের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি ১৭১টি সংস্থা ইসির কাছে তথ্য যাচাইয়ের কাজও করছে।
কাজ কি এ টিমের
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিস্টেম অ্যানালিস্ট আক্তারুজ্জামানকে আহ্ববায়ক করে গঠিত কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমে আরও রয়েছেন উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডেটাবেজ) মেজর মো. মামুনুর রশীদ, রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহাগ, প্রোগ্রামার মো. সিরাজুল ইসলাম, নেটওয়ার্ট কনসালট্যান্ট মো. শওকত আকবর মুন্সি, ডেটাবেজ কনসালট্যান্ট টিপু সুলতান, সহকারী প্রোগ্রামার নুসরাত জাহান উর্মি এবং সহকারী প্রোগ্রামার আমিনুল ইসলাম।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে নির্বাচন কমিশনের জরুরি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; সাইবার বা ডিজিটাল হামলা হলে এবং সাইবার বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব থাকছে এই টিমের ওপর।
এ টিম সম্ভাব্য ও আসন্ন সাইবার বা ডিজিটাল হামলা প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও গ্রহণ করবে।
এছাড়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে সমধর্মী দেশি/বিদেশি কোনো টিম বা প্রতিষ্ঠানের সাথে তথ্য আদান-প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবে এই ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম।