হাসপাতালের মর্গে রাখা মৃতদেহগুলো এতটাই পুড়েছে যে, দেখে ছেলেকে শানাক্ত করতে পারেননি ফরিদপুরের আব্দুল হক।
Published : 06 Jan 2024, 12:53 PM
ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নেমে আরেকটি ট্রেন ধরে সৈয়দপুর যাওয়ার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু তালহার। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার দুই ঘণ্টা আগেও তালহার কথা হয় তার বাবার সঙ্গে; কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে ছেলের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছেন বাবা আব্দুল হক।
তালহার খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুল হক অঝোরে কাঁদছিলেন।
কারণ হাসপাতালের মর্গে রাখা মৃতদেহগুলো এতটাই পুড়েছে যে, তার মধ্যে তালহা আছেন কিনা, তা বুঝতেই পারেননি আব্দুল হক।
ভোট ঠেকাতে বিএনপির ডাকা হরতালের আগে শুক্রবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগ কাঁচাবাজারের কাছে এসে থেমে যায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। বেনাপোল থেকে দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রেনটিতে সে সময় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে, দগ্ধ হয়ে হাসাপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন আটজন। নিহতদের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
ফরিদপুরের একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আব্দুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় তালহা সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র।
তালহা ফরিদপুরে বাড়িতে গিয়েছিলেন কদিন আগে। ঢাকায় আসতে শুক্রবার বেনাপোল এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন। কথা ছিল ঢাকায় নেমে রাত ১১ টায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ধরবে সৈয়দপুর যাওয়ার জন্য, সেই টিকেটও কাটা ছিল তার। কিন্তু এখন এই তরুণ নিখোঁজ।
আব্দুল হক বলেন, “তালহা আমাকে বলেছিল, বাবা ঢাকায় পৌঁছে ফোন করব। রাতে টিভিতে ট্রেনে আগুনের খবর দেখে কতবার যে ছেলের মোবাইলে ফোন করলাম, কিন্তু আগুন লাগার পর থেকেই ওর ফোন বন্ধ পাচ্ছি।”
সময় নষ্ট না করে রাতেই ফরিদপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকায় ছুটে আসেন আব্দুল হক। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে জানতে পারেন লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকা মেডিকেলে এসেও শুরুতে লাশ দেখতে পারেননি আব্দুল হক।
শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা চারজনের মৃতদেহ আব্দুল হককে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “দেহগুলো পুরো অঙ্গার হয়ে গেছে। সেগুলো দেখে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব না।”
বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের পর আরো অন্তত চারজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে বোনের খোঁজে ঘোরাঘুরি করছিলেন আইনজীবী জাহিদা সুলতানা তনিমা।
তিনি বলেন, তার বোন এলিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে তার পাঁচ মাসের শিশু সন্তানও রয়েছে। তাদের বাড়ি মাগুরা।
সেই সময়েই গোলাপবাগ মসজিদের মাইক থেকেও ঘোষণা আসছিল তিন বছরের শিশু আব্দুল্লাহকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাবা মো. বাদশাহ শিশুটিকে খুঁজছেন। কেউ পেয়ে থাকলে মসজিদে শিশুটিকে নিয়ে আসার অনুরোধ জানান হয় মাইকের ঘোষণায়।
ট্রেনের আগুনে দগ্ধ হওয়া যাত্রী আসিফ মোহাম্মদ খানের স্ত্রী নাতাশা জেসমিন নেকি (২৫) নিখোঁজ রয়েছেন। আসিফ আছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ট প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
ইনস্টিটিউটে আসিফের বাবা আবু সিদ্দিক খান বলেন, “আগুন লাগার পর দরজা দিয়ে বের হতে না পেরে আসিফ জানালা দিয়ে মাথা বের করে। সে সময়ে লোকজন তাকে টেনে বের করতে পারলেও নাতাশা বের হতে পারেনি। আমরা এখনো নাতাশাকে খুঁজে পাইনি।”
নারিন্দার বাসিন্দা আবু সিদ্দিক জানান, আসিফ ও নাতাশা ফরিদপুরের ভাঙায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন।
চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমির (২৮) খোঁজে ঘুরছেন তার ভাই দিবাকর চৌধুরী। তারা থাকেন ঢাকার ইন্দিরা রোডে। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে।
আরও পড়ুন
· ‘বাচ্চা-বউ পুইড়া গেছে, বের হয়ে কী করব’
· ঢাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন, নিহত ৪
· বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন ‘স্পষ্ট নাশকতা’: ডিএমপি
· রাজশাহীর পর সোনাগাজীতে ভোট কেন্দ্রে আগুন, স্কুলের অফিস সহকারী আটক