“আগুনে পুড়িয়ে মারা, এটি কোনো মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে এবং আইনের আওতায় নেওয়া হবে”, বলেন ডিএমপির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
Published : 06 Jan 2024, 12:18 AM
ভোট ঠেকাতে বিএনপির ডাকা হরতাল শুরুর আগের রাতে রাজধানী ঢাকার পথে বেনাপোল এক্সপ্রেস আগুনের ঘটনাটিকে ‘স্পষ্ট নাশকতা’ বলছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ঘটনা পর শুক্রবার রাতে গোপীবাগে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, “ঘটনার কারণ এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে এটি যে নাশকতা তা স্পষ্ট; এটি বুঝাই যায় যে ইচ্ছে করে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।”
যাত্রীবেশে ট্রেনে আগুন দেওয়া হতে পারে, এমন ধারণার কথাও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
যারা এই কাজ করেছে তাদেরকে আইনের কাছে যেতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। বলেন, “সাধারণ যাত্রীর প্রতি, সাধারণ মানুষের প্রতি, শিশুর প্রতি এ ধরনের অমানবিকতা, এ ধরনের সহিংসতা এবং আগুনে পুড়িয়ে মারা, এটি কোনো মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে এবং আইনের আওতায় নেওয়া হবে।“
কোন আলামত পাওয়া গিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রথম কাজটি ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানো কাজটি করেছে। জীবন বাঁচানো প্রথম কাজ সেটি ফায়ার সার্ভিস করেছে। এখন পুলিশের গোয়েন্দারা কাজ করছে, আলামত সংগ্রহ করছে, তারপর জানা যাবে।”
শুক্রবার রাতে যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি তার গন্তব্যস্থল কমলাপুর পৌঁছার কিলোমিটার দুয়েক আগে থেমে যেতে বাধ্য হয়। ততক্ষণে আগুনে ট্রেনটির তিনটি বগি পুড়ে গিয়ে চার জনের মৃত্যু হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল শুরুর আগের রাতে এই আগুনের ঘটনাটি ঘটল। এদিন সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, একটি পক্ষ মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তাদের তথ্য পেয়েছেন তারা।
১২ ঘণ্টা যেতে না যেতেই এই ঘটনাটি ঘটে।
এটি নাশকতা হলে কেন প্রতিরোধ কেন করা গেল না- এই প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, “দেখুন, প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলেই কিন্তু নাশকতাকারীরা যত ঘটনা ঘটাতে চায়... আপনি দেখবেন যে, গত ১৫ দিনে কতটি পরিকল্পনা নষ্ট করেছি। কতগুলো নাশকতাকে নীরবে প্রতিহত করেছি তার কিন্তু কোনো হিসেব নেই।
“কিন্তু তারা যেটি ঘটাতে পেরেছে এটা হিসেবে আসছে।”
ভোট বর্জন করে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে ট্রেনে বেশ কিছু নাশকতার মধ্যে বড় ধরনের দ্বিতীয় আগুন এটি।
গত ১৯ ডিসেম্বর নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়ানোর পর আগুন দেওয়া হয় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে। তেজগাঁও স্টেশনে থামতে বাধ্য হওয়া সেই ট্রেনেও মা-শিশুসহ চার জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাটিও নাশকতা বলেছিল পুলিশ।
খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, “নাশকতাকারীরা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এটা সত্য। সে কারণে অনেককে আইনের কাছে নেওয়া হয়েছে, অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে, অনেকে চিহ্নিত হয়েছেন। আজ না হোক কাল, তাদের আইনের কাছে যেতে হবে।"
ঢাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন, নিহত ৪
ট্রেনে আগুনে প্রাণহানির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর শোক
হরতাল ও অবরোধের আগে কেন এ ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এর প্রধান কারণ হলো মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করা, মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন নষ্ট করা। নাশকতার উদ্দেশ্য আর কী থাকতে পারে?”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে ৪০ জনের বেশি নাশকতাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় আর অনেককে চিহিৃত করা হয়েছে।”
বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ঢাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানিয়েছেন।
এছাড়া আসিফ নামে ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ও কৌশিক বিশ্বাস নামে এক চিকিৎসক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুঁলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
বেনাপোল থেকে দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ঢোকার পর কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর আগে সায়েদাবাদ থেকে গোলাপবাগের পথে ওই ট্রেনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
আগুনে চারটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর মোখলেছুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চ বগিতে প্রথমে আগুন দেখা যায়। এরপর পাওয়ার কার এবং আরো দুটি বগিতে আগুন ছড়িয়ে যায়।”
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার রাত ৯টা ৫মিনিটে চলন্ত ট্রেনে আগুন লাগার খবর পান তারা। আগুন নেভাতে মোট আটটি ইউনিট সেখানে পাঠানো হয়। তারা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয়রা এবং র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও উদ্ধারকাজে সহায়তা করেন।