“এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ অগাস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু, জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।”
Published : 11 Nov 2024, 03:58 PM
রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সোমবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে ৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার যে, আমরা ৫ অগাস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু, জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তাকে আর কোথাও দেখা যাবে না।”
শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, তারা “১৯৭২ এর সংবিধান থেকে শুরু করে দুর্ভিক্ষ, কোটি কোটি টাকা পাচার এবং হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধীদের বিচারবহির্ভুত হত্যাসহ (৭২-৭৫, ২০০৯-২০২৪) বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যা যা করেছেন, আওয়ামী লীগকে তা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা ১৯৭১-এর আগের শেখ মুজিবের কথা বলতে পারি।”
বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে জাতির পিতার হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন বিল।
এরপর ১০ জুলাই তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব আবদুল আজিজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে সংবিধানের ৪ক অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি টানানোর নির্দেশনা জারি করা হয়।
৪ক অনুচ্ছেদে বলা হয়- “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। বিভিন্ন অফিস থেকে নামিয়ে ফেলা হয় শেখ হাসিনার ছবি।
রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন তিন উপদেষ্টার শপথ অনুষ্ঠানের সময়ও বঙ্গভবনের দরবার হলে তাদের পেছনে বঙ্গবন্ধুর ছবিটি ছিল। এর প্রতিবাদ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেইসবুকে লেখেন, “আমরা সারাদিন লীগ তাড়াবো আর বলবো, ‘মুজিববাদ, মুর্দাবাদ’। আর তারা মুজিবের ছবি পিছনে টানিয়ে করে শপথ পাঠ।”
এরপর সোমবার আরেক ফেইসবুক পোস্টে দরবার হল থেকে ওই ছবি সরানোর কথা জানিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, সেখানে তাকে বঙ্গভবনের সেই শপথ মঞ্চের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তবে পেছনে শেখ মুজিবের ছবিটি আর নেই।
পুরনো খবর