২০০৯ সালে ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমছে। নির্বাচন কমিশন এবার বলছে, ভোটের হার হতে পারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
Published : 09 May 2024, 01:30 AM
বিএনপির বর্জনের মধ্যে নৌকা মার্কা না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার আওয়ামী লীগের কৌশল শেষ পর্যন্ত ভোটার টানতে পারল না উপজেলা নির্বাচনে; শুধু এবার নয় গত চারটি উপজেলা ভোটেই ধারাবাহিকভাবে কমছে উপস্থিতি।
বুধবার প্রথম ধাপের ভোট শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে উপস্থিতি কম হওয়ার এ নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগ অবশ্য উঠেছে কম; যা গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনকে তুলে এনেছে বিতর্কের কেন্দ্রে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে এদিন ১৩৯টিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেড় সহস্রাধিক প্রার্থী ছিল। তিন পদে প্রতি পদের বিপরীতে গড়ে চারজন প্রার্থী নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার পরও ভোটার কেন্দ্রে এসেছে তুলনামূলক কম।
দিন শেষে নির্বাচন কমিশনও ধারে কাছে কোনো ধারণা দিতে পারেনি। ভোটের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হতে পারে, জানানো হয়েছে এমনটি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও বৈরী আবহাওয়া ও ধান কাটা মওসুমসহ নানা কারণে ভোটার উপস্থিতি প্রত্যাশিত হয়নি বলে মনে করেন। তবে ভোট শান্তিপূর্ণ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির বর্জনে ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনেও ভোট পড়েছিল ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে তাদের অংশগ্রহণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে উপস্থিতি ছিল ৬১ শতাংশ। ২০০৯ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল আরও বেশি; ৬৮ শতাংশ।
চার ধাপে ভোট হবে এবার। প্রথম ধাপের পর আগামী ২১ মে, ২৯ মে ও ৫ জুন তিনটি ধাপে ভোট রয়েছে।
বাকি ধাপগুলোর গড় ভোটার উপস্থিতির উপরই সার্বিক ভোটের হার নির্ভর করায় পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে আরও এক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
সিইসির মতো একই সুর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠেও। তবে ভোটার কম হলেও এ হারকেই সন্তোষজনক বলেছেন তিনি। তার দৃষ্টিতে প্রাণহানি হয়নি, এটি স্বস্তিদায়ক।
তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “নির্বাচনি ব্যবস্থা ‘ধ্বংস’ হয়েছে বলে ‘আকাল’ দেখা দিয়েছে ভোটারের।
বিক্ষিপ্তভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিএনপির অনেকে নির্বাচন করলেও দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকায় বেশির ভাগ উপজেলাতেই ভোট হয়েছে নিরুত্তাপ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
কতটা কাজে দিল আওয়ামী লীগের ভিন্ন কৌশলের ভোট
আওয়ামী লীগ নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ দেখানোর কৌশলে উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক দেয়নি। ফলে নয় বছর পর এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী নেই। যদিও প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা, তারা ভোট করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে যার যার মতো।
২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক যুক্ত হওয়ার পর এবারই ‘অভিনব’ এমন নির্বাচন হল যেখানে প্রার্থীদের ৯৯ শতাংশেরও বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
যখন দলীয় প্রতীক ছাড়া স্থানীয় নির্বাচন হত, তখন দলগুলো পরোক্ষভাবে প্রার্থী দিত, কিংবা কোনো না কোনো নেতার প্রতি সমর্থন জানাত। এবারও তাও ছিল না।
বিএনপি এ নির্বাচনও বর্জন করলেও দলটির তৃণমূলের অন্তত ৭৯ জন নেতা ভোটে ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন লড়াই করেছেন চেয়ারম্যান পদে। এসব নেতা ভোট বর্জন করায় তুলোধুনা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। অন্যদিকে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আঁতাত হয়েছে ‘অশুভ শক্তির’।
তাদেরকে বহিষ্কার করে দিয়েছে বিএনপি। ফলে কাগজে কলমে এরাও ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বিএনপি নেতাদের আশা ছিল, তাদের কর্মী সমর্থকরা পাশে দাঁড়ালে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর ফাঁক গলে জয় পাবেন তারা।
তবে বিরোধী দলটির যেসব নেতা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে ছিলেন, তারাও কর্মী সমর্থকদের টানতে পেরেছেন কমই। কম সংখ্যক নেতাই জিততে পেরেছেন বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পেরেছেন।
বিএনপির এই ‘বিদ্রোহী’ নেতাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বেশির ভাগই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। তবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজীপুর সদর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ইজাদুর রহমান চৌধুরীর জয় তৈরি করেছে চমক।
শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে আমিনুল ইসলাম বাদশা, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে আবদুল হামিদ ও বান্দরবানের সদর উপজেলায় আবদুল কুদ্দুসের জয়ের তথ্য মিলেছে।
ভোটের হারে ভাটার যত কারণ
সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম মনে করেন, সব দলের অংশগ্রহণে ভোট না হওয়ায় ভোটাররা কেন্দ্রে আসার উৎসাহ হারাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের মধ্যে এখন ভোট দেওয়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে।
“এটার পেছনে একটি কারণ নয়, অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে বড় একটি কারণ হচ্ছে, সব দলের অংশগ্রহণে ভোট হলে এক ধরনের পরিবেশ থাকে, ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে। যেহেতু সব দলের অংশগ্রহণে ভোটগুলো হচ্ছে না, তাই ভোটার কম আসছে।”
২০১৭-২০২২ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রতিটি দলেরই একটি নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক আছে। যদি সেই দলটির প্রার্থী না থাকে, সেক্ষেত্রে ভোটারের সংখ্যা কমবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যদি সবাই একজন করে প্রার্থী দিত, তাহলে ভোটারের সংখ্যা বাড়ত।”
একই উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়ে কেন ভোটার টানতে পারেননি- এই ব্যাখ্যায় সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “যদিও দলের প্রতীক দেয়নি, কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই দাঁড়িয়েছে। তাই তাদের ভোটাররাই হয়ত গিয়েছে। তারা অনেক সময় বুঝতে পারে, কে জিতে যাবে। তাই তারা ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে না।”
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে যেমন মরিয়া হয়ে কাজ করত, এখন সে রকম হয় না বলেই মনে করছেন কবিতা।
তার ভাষ্য, “আগে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা যেভাবে কাজ করত, ঘরে ঘরে ভোট চাইতে যেত, ভোটের স্লিপ দিত, কেন্দ্রে আনার জন্য যে প্রচার-প্রচারণা চালাত, সেটা এখন আগের মত নেই। এখন শুধু মিটিং করে, পথসভা করে। এটাও ভোটারদের কেন্দ্রে না আসার কারণ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের খরা দেখা দেবে।”
নির্বাচক বিশ্লেষক আব্দুল আলীম জনগণকে ভোটে আগ্রহী করে তুলতে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “একটি নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হয়, যদি সব দলের অংশগ্রহণ না থাকে, তখন ভোটাররা সেই ভোটে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ সেই ভোটের ফলটা তারা আগে থেকেই অনুমান করে ফেলে।
“একটি উপজেলায় যদি চার-পাঁচজন প্রার্থী থাকে, আবার একই দলের হয়, তাহলে ভোটাররা মনে করবে, যেই জিতুক, একই দলের লোক জিতবে। তাহলে সে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কী করবে?”
ভোটার উপস্থিতি প্রতিবারই কমে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটাও আরেকটি সংকেত যে, আমরা নির্বাচনকে আমরা উৎসাহের জায়গায় নিয়ে যেতে পারছি না। একটা নির্বাচনে যখন ভোটে ভোটারের উপস্থিতি কম হয়, তখন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।”
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ’র মতে, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অবসাদ রয়েছে। এটি জাতীয়ভাবে। এতে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই।
“নির্বাচনের সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন অযথা ঝামেলায় জড়াতে চায় না। প্রার্থী হওয়াটাও কঠিন কাজ। প্রার্থী হতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। এগুলো কারণে অনেকেই প্রার্থী হচ্ছেন না; প্রার্থী কম হওয়ায় ভোটাররাও কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে।”
ভোটে যা হয়েছে
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলে। এই ধাপে ২২টি উপজেলায় ইভিএম ও বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছে।
ভোটে খুব বেশি গোলযোগ বা অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। তবে অন্তত একটি উপজেলায় একজন আওয়ামী লীগ নেতা সরে গেছেন ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাকির হোসেন গতবার জয় পেয়েছিলেন নৌকা প্রতীকে। এবার দলের অন্য নেতাদের মত তিনিও ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে আসতে না দেওয়া, কেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ এনে বুধবার দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় দিনভর ভোটে কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে গতবার নৌকা নিয়ে জয় পাওয়া মামুন আল মাসুদ খান ফেইসবুক লাইভে এসে ‘ব্যাপক অনিয়মের’ অভিযোগ আনেন।
এই উপজেলায় মামুনের প্রতিদ্বন্দ্বী আওলাদ হোসেনও আওয়ামী লীগেরই নেতা। গণনার শুরু থেকেই দুই জনের ভোট ছিল কাছাকাছি। শেষ বেলায় পিছিয়ে পড়েন মামুন।
খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞেজর ভোলা হাট, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ কিছু এলাকায় এদিন ভোটের সময় হুমকি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তবে বড় ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষ বা অনিয়মের অভিযোগ কম।
দিনভর বিভিন্ন অপরাধে ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারিক হাকিমরা। এদের মধ্যে ১৯ জনকে এক সপ্তাহ থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং নয়জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ একটি শিশু আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পাঁচজনকে শাস্তি না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারিক হাকিমরা।
সকাল বেলা অধিকাংশ এলাকায় ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। কিছু এলাকায় বাগড়া দেয় বৃষ্টি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও বাড়ে।
প্রথম চার ঘণ্টায় গড়ে ১ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়ার ধারণা দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ভোট শেষে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এবার ভোটের হার গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি হবে না বলে তার ধারণা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উপস্থিতি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মতো হবে।
যেসব এলাকা ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগে ভোটার উপস্থিতি এই সীমার মধ্যেই দেখা গেছে।
দুপুরে কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমতে, আপনাদের দোয়ায় ও জনগণের স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোট নির্বিঘ্নে হয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় আধা বেলা প্রত্যাশিত ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও বিকালে উপস্থিতি বেড়েছে।”
আওয়ামী লীগ-বিএনপি যা বলল
ভোট শেষে যখন গণনা চলছিল, তখন সন্ধায় আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের জানানো ৩০-৪০ ভাগ উপস্থিতি, এটা সন্তোষজনক। আমরা মনে করি টার্নআউট সন্তোষজনক, প্রাণহানি ছাড়া একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়াটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। তিনি বলেন, “ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেকের আশঙ্কা ছিল খুনোখুনির; রক্তাক্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে। কিন্তু এই নির্বাচনে দেশের কোথাও কোনো প্রাণহানির ঘটনা নেই। কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে।”
একই দিন অন্য এক আয়োজনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি ভোট বর্জন করে ‘আত্মহননমূলক রাজনীতি’ করেছে।
তিনি বলেন, “অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত তারা দেশের সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা এমন কি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে আমার প্রশ্ন-কোনো নির্বাচনেই যদি অংশ নিতে পারেন, তবে আর কেন বিএনপির রাজনীতি করবেন।"
অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কম ভোটার উপস্থিতির দায় দিয়েছেন সরকারি দলকে।
তিনি বলেন, “বাঙালিরা ১৯৩৭ সাল থেকে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করে এসেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নির্বাসনে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আজকে (গতকাল) দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। টেলিভিশনগুলোতে দেখাচ্ছে, কেন্দ্রগুলো ‘খা খা’ করছে, কোনো ভোটার সেখানে যায় নাই।”
কেন এই অবস্থা হল?-এ প্রশ্ন রেখে বর্ষীয়ান এই বিএনপি নেতা বলেন, “কেন মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ‘বিলুপ্ত’ হল? কেন দেশে আইনের শাসন নাই? কেন মানুষের মৌলিক অধিকার নাই। কারণ, ভোট ব্যবস্থাকে ওরা ধ্বংস করে দিয়েছে।”
>> ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে এক দিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন ছয়টি ধাপে ও ২০১৯ সালে পাঁচ ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের ভোট হয়।
>> সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১% এর বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১% এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯% ভোট পড়ে।
>> কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে প্রায় ৪২%। গেল মার্চে অনুষ্ঠিত ময়নমসিংহ সিটি নির্বাচনে প্রায় ৫৬% আর কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রায় ৩৯% ভোট পড়ে।
আরও পড়ুন
শান্তিপূর্ণ ভোটে স্বস্তি সিইসির
উপজেলা নির্বাচন: বাতিলের খাতায় ২.২% ভোট
নৌকা ছাড়া ভোটের ‘কৌশল’ কেমন ফল দিল
গণতন্ত্রের চর্চা নেই বলে ভোটে মানুষের অনীহা: জিএম কাদের
দিবস পাশে রেখে ভোটাররা আস্থার খোঁজে
উপজেলায় প্রথম ধাপের ভোট শেষে ফলের অপেক্ষা