নারীর প্রতি সহিংসতা, নৃশংসতা, সংজ্ঞায়িত-অসংজ্ঞায়িত সকল যৌন নিপীড়ন এবং দঙ্গল-অবজ্ঞা চলার এমন চরমাবস্থায়, স্বৈরাচার হটানো গণঅভ্যুত্থানের গরিমায় ঋদ্ধ বাংলার মেয়েদের প্রতিরোধপ্রত্যয়ী আওয়াজ তুলতে আবারও রাজপথে নামতে হয়েছে— ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘আমার সোনার বাংলায়/ ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’।
Published : 11 Mar 2025, 01:43 AM
মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। দেশকে শত্রুমুক্ত করার জনযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতার বলি হয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, দুই লক্ষ নারী যৌননৃশংসতার শিকার হয়েছেন। নারীর প্রতি পুরুষতন্ত্রের এই শক্তিপ্রদর্শন স্বাধীন এই দেশেও নারীকে ‘পরাধীনতা’র শৃঙ্খলে বন্দি করে রেখেছে যুগ-যুগান্তর। সেজন্যই স্বাধীন হওয়া ও মুক্তি পাওয়া এক বিষয় নয়। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও, মানুষের মুক্তি ঘটেনি, নারীর তো নয়ই।
স্বাধীন এই দেশে মুক্তি না পাওয়ার প্রতীক দিনাজপুরের ইয়াসমিন, রাঙামাটির কল্পনা চাকমা, কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু, ফেনীর নুসরাত জাহান, মাগুরার পূর্ণিমা সমাদ্দার, ঢাকার মোসারাত জাহান মুনিয়া প্রমুখ। তাদের দলে মাত্রই গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘যোগ দিল’ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগানের ১০ বছর বয়সী শিশু পূর্ণিমা রেলী। মাস না ঘুরতেই এবার ‘যোগ দিল’ মাগুরার আট বছর বয়সী এক শিশু।
নাহ, ‘যোগ দিল’ পরিমার্জন করতে হলো। শিশু দুটিকে এই দলে ‘যোগ দিতে হলো’। যোগ দিতে বাধ্য করল এই ধর্ষকামী পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। উল্লিখিত পূর্বতনদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য শুধু এক জায়গায়— বয়স। এমন ব্যাডাগিরির আধিপত্যবাদী সমাজ আমাদের, যেখানে পৃথিবীর ক্লেদজ-কলুষ নিজের কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বোঝার আগেই আমাদের (কন্যা)-শিশুরা পুরুষতন্ত্রের বর্বরতার শিকারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে! চা বাগানের মেয়ে পূর্ণিমা তার ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি’ হারিয়েছে ইতিমধ্যেই, ধর্ষণ করতে না পেরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হলেও, আমরা জানি না, মাগুরার শিশুটির সামনে কোন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে।
২.
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস গেল। প্রতি বছরই নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে সভা-সেমিনারে নানান দাবিদাওয়া তুলে ধরে ক্ষমতাবানদের মনে করিয়ে দিতে হয়— নারীরা আজও কতটা উপেক্ষিত। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, এবার আর এই দিবস ঘিরে সভা-সেমিনারে সীমাবদ্ধ থাকার সুযোগ থাকল না। সময়ের সবচেয়ে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন নারীরা, শ্রেণিনির্বিশেষ। তাই নারী দিবসের মধ্যরাতে দেশে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা, বলা ভালো নারী শিক্ষার্থীরা।
মৌলভীবাজার ও মাগুরা-কাণ্ডের মধ্যেই ঢাকার কেরানীগঞ্জের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন; কুমিল্লার লালমাইতে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ।
প্রান্তিক জনপদের এই বীভৎসতা যে সমগ্র সমাজের নারীবিরোধী মনোঃবৈকল্যের সূত্র মেনে চলছে তার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে সামনে এলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এলাকায় এক ছাত্রীকে পোশাকের কারণে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর হেনস্তার ঘটনায় এবং পরবর্তী সময়ে দঙ্গল (মব) বেধে ওই হেনস্তাকারীকে ছাড়িয়ে এনে ফুলের মালা দিয়ে ‘পুরস্কৃত’ করার কাণ্ডকারখানায়।
নারীর প্রতি সহিংসতা, নৃশংসতা, সংজ্ঞায়িত-অসংজ্ঞায়িত সকল যৌন নিপীড়ন এবং দঙ্গল-অবজ্ঞা চলার এমন চরমাবস্থায়, স্বৈরাচার হটানো গণঅভ্যুত্থানের গরিমায় ঋদ্ধ বাংলার মেয়েদের প্রতিরোধপ্রত্যয়ী আওয়াজ তুলতে আবারও রাজপথে নামতে হয়েছে— ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘আমার সোনার বাংলায়/ ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’।
বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির কথা বলে জনগণের অর্ধেক অংশকে যেভাবে নিপীড়নের ঘেরাটোপে বন্দি করা হয়েছে, সে বাধার বিন্ধ্যাচল ভেঙে দিতে মেয়েরা গভীর রাতে নেমে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথে— এই ইতিহাস নিশ্চয়ই এ লড়াইকে বেগবান করবে। আজ তাদের ‘রাজুতে আয়’ ডাকার কেউ নেই, সে পৌরুষকণ্ঠগুলো অপাঙক্তেয় হয়ে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে, কিন্তু নারীকে তো তার লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে বিষমবাদী এই সমাজে। তাই, নারীরা বুঝে গেছেন, ‘স্লোগান দিতে গিয়ে আমি চিনতে শিখি.../ কে ভাই কে দুশমন।’
কাল যারা সহযোদ্ধা ছিল, তাদের অনেকেই আজ তার দুশমন নতুবা দুশমনের পরোক্ষ প্রেরণাদাতা হয়ে গেছে। মেয়েরা আজ তাই সেই সহযোদ্ধাদের ন্যারেটিভ ভেঙে মাঝরাতে ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে পরোক্ষে বলছেন, ‘এসো বোন এসো ভাই/ রাজু করি অকুপাই’!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুরুষতন্ত্রের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা রাজপথ আবারও নিজেদের করে নিয়েছেন। বিগত সরকারের ‘রাজাকার’ ভর্ৎসনা শুনে এই মেয়েরাই মাত্র ৯ মাস আগে রাতের রাজপথ যখন কাঁপাতে পেরেছেন, তখন ‘ধর্ষিতার কাতর চিৎকার’ শুনে তারা ঘরে বসে থাকবেন কোন লাজে, কোন যুক্তিতে?
৩.
এই এমন পরিস্থিতিতেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী নিরুত্তাপ! কয়েকদিন আগে ঢাকার লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে ধূমপানের কারণে দুই তরুণীকে হেনস্তা করার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্টো ‘ভিক্টিম ব্লেমিংয়ে’র পথ বেছে নিয়ে আইনের ভুলভাল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। মন্দের ভালো অবশেষে লালমাটিয়ার ঘটনায় ‘উত্ত্যক্তকারী’ গোলাম মোস্তাকীম রিংকু নামের এক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। একজন উপদেষ্টা রিংকুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানালেও পুলিশের পক্ষে এখনও গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়নি। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতদলের ধর্ষণের অভিযোগকে স্বভাবসুলভ সরকারি প্রেসনোটের ভাষায় নাকচ করে দিয়েছে। অথচ, আইনি প্রক্রিয়ায় সেটি নাকচ করার হলে, তা করবে বিচার বিভাগ, প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই নির্বাহী বিভাগ নাক গলিয়ে ফেলল! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত আইন সত্যই জানে না!
আইনশৃঙ্খলার এমন নাজুক অবস্থাতেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি অপসারণের দাবিতে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু দায় স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করেন না, কিংবা তাকে অপসারণ করা হয় না। তাহলে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষায় মানসিকতার পরিবর্তনটা ঘটল কোথায়? সেই একই বাগাড়ম্বর, সেই একই দায় এড়ানোর সংস্কৃতি!
অন্যদিকে, ধর্ষণের স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়াও জারি আছে রাষ্ট্রে। নইলে ধর্ষণের জন্য সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী সাজা ভোগ শেষ হওয়ার আগে জামিন পায় কীসের ভিত্তিতে! এমনটা না হলে ‘যাবজ্জীবনের আসামি ছাড়া পাইল ক্যানে?’— ধর্ষণের শিকার দিনাজপুরের এক শিশুর বাবার কণ্ঠে এমন আক্ষেপ প্রকাশ পেত না। নিশ্চয়ই নারীকে স্পর্শকাতরতার জায়গা থেকে অপব্যবহার করে নিরাপরাধ কাউকে ফাঁসানোর পাঁয়তারা জায়েজ করার সুযোগ নেই। কিন্তু, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত কাউকে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেওয়ারও সুযোগ থাকা উচিত নয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেছেন, ধর্ষণের তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনে ও বিচার প্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার পাশাপাশি ধর্ষণ মামলা জামিন-অযোগ্য করে আইন সংশোধনের প্রস্তুতি চলছে। নিঃসন্দেহে, আন্তরিক উদ্যোগ। যদিও, ১৫ দিনে তদন্ত সম্পন্ন করতে না পারলে, তদন্ত কর্মকর্তারা কীভাবে ঘটনার বিহিত করবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশের যথেষ্ট কারণ আছে। তদন্ত কোনো স্ট্যাটিক বিষয় নয়। তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার ডালপালা মেলতে থাকলে, প্রতিবেদন দেওয়ার কাজ বিলম্বিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যে আছেই, তা তো বলা বাহুল্যই।
তবে, এই উদ্যোগের পরও আসল উদ্বেগটা থাকছেই— আর কতকাল নারীদের দেখতে হবে এমন খাণ্ডবদাহন? ন্যায়বিচার যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ও, তবুও কি নারীর প্রতি হওয়া সহিংসতার কারণে এই পুরুষশাসিত দঙ্গল সমাজব্যবস্থা নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না? কিংবা বদলে যাবে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি?
এ সমাজে নারীর প্রতিবন্ধকতা বহুবিচিত্র। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজই এসব প্রতিবন্ধকতার সনদপত্রের বিধান তৈরি করে রেখেছে। এ কালের এবং অনিবার্যভাবেই এ অঞ্চলের বহুবিধ চরিত্র— ধনতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী, রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদী, ধর্মীয় উগ্রতাবাদী, রক্ষণবাদী, উদারতাবাদী, পাতিবুর্জোয়া মানবতাবাদী প্রভৃতি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, একটি অপরটির ‘পক্ষে’ এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেছে যে, আমাদের সমাজবোধ, ধর্মবোধ কিংবা মানবতাবোধের নিক্তিতে নারী কিংবা নারীর শরীর হয়ে উঠেছে এক ‘ভোগ্যবস্তু’।
৪.
নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে বহু আলাপ সমাজে জারি আছে। গত ৩৪ বছর ধরে সাধারণভাবে এদেশে নারী ক্ষমতায়নের ইন্ডিকেটর হিসেবে বেঞ্চমার্ক মনে করা হয়েছে খালেদা-হাসিনাকে, তাদের রাজনৈতিক আদর্শগত বাইনারির ভেদজ্ঞান মনে রেখেই। সন্দেহ নেই, এর মধ্যে এক বিশাল লজিক্যাল ফ্যালাসি আছে। কিন্তু, তার চেয়েও বেশি আছে মোহ। মোহের চাকচিক্য। যে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার তারা প্রতিনিধি, তার মধ্যেই খোদ নিপীড়নমূলক আধিপত্যবাদী ব্যবস্থার বিষদাঁত লুকিয়ে আছে। শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ!
তারপরও যে তারা নারী ক্ষমতায়নের বেঞ্চমার্ক হয়ে ছিলেন বা আছেন এতদিন, এর কারণ মানুষের পলিটিক্যাল ডিজায়ার। মানুষ রাজনৈতিক প্রাণী, সন্দেহ নেই। নারীও রাজনীতিরই সাবজেক্ট, কখনওবা টুল। কিন্তু, শুধু পলিটিক্যাল ডিজায়ার দিয়েই এই সাগরপ্রমাণ পথ নারী পাড়ি দিতে পারবে না। অথচ, রাজনীতি ঠিক হলে হয়তো নারীর সেই সংগ্রামটা আরও একটু সহজতর হতো। কিন্তু, সত্য এই যে, নারীর অলংকৃত কোনো উচ্চপদই নারী ক্ষমতায়নের গ্যারান্টি আগেও দেয়নি, ভবিষ্যতেও দিবে না।
ব্যাডাগিরির সমাজে ধনতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও পিতৃতান্ত্রিক পেশিশক্তি এমন এক জালিমে রূপ নেয়, যেখানে নারীর আর কোনো শ্রেণিপরিচয় থাকে না। শ্রেণিনির্বিশেষে সে হয়ে ওঠে সততই মজলুম। এর রাজনৈতিক লিগ্যাসি আজও সমাজের গায়ে বয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন আরও গভীরভাবে সেই স্টেজে অবস্থান করছে। এখন যা চলছে, সেটিকে নারীর প্রতি সহিংসতার ‘পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ (টেক্সটবুক এক্সামপল) না বলে আর কীইবা বলা যায়! ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞকে 'টেক্সটবুক এক্সামপল অব এথনিং ক্লিনজিং' আখ্যায়িত করেছিলেন জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের তৎকালীন প্রধান জিয়াদ রাদ আল-হুসেইন। এই রেফারেন্স মিলিয়ে পাঠ করলে আমরা দেখব, একাত্তরের বর্বরতার পর নারীর প্রতি দঙ্গলীয় ঘৃণা উৎপাদনের ক্ষেত্রে আজকের এ সময়টি বেশ তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। এখন যা চলছে, সকল শ্রেণির নারীর প্রতি ঘৃণা উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর কীইবা হতে পারে। দল, মত, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, শ্রেণি নির্বিশেষে প্রতিরোধটাও তাই সাড়া জাগানিয়া হওয়ার বিকল্প নেই। প্রতিটি জাতীয় সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের আশার বাতিঘর হয়ে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলেন। এবার প্রয়োজন আপামর নারীশক্তির উত্থান।
আমরা সবাই জানি, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে খুনি ও ধর্ষক প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের অদম্য ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে নারীশক্তির এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই থেকে যে কোনো যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগরের কথা বারবার উচ্চারিত হয়। আশার কথা, এবার পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও জেগেছেন। এটিও কিন্তু গণঅভ্যুত্থানেরই শক্তির ফল— জাতীয় সংকটরোধে রাজপথই আমাদের অদ্বিতীয় বিকল্পের নাম।
যদিও সত্য এই যে, অনিবার্যভাবেই নারীমুক্তির এ লড়াই আরও দীর্ঘ করতে হবে, কেননা ব্যাডাগিরির সমাজে নারীর লড়াই অনন্ত-অসীম। সমাজের চলমান এ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই নারীশক্তির উত্থান অনিবার্য হয়ে উঠছে। বিন্দুদের শক্তিতেই সিন্ধু যেমন সমুদ্রমুখী হয়েছে, এ সমাজকেও নারীশক্তির সর্বপ্লাবি উত্থান ও নারীমুক্তির ফয়সালার মধ্য দিয়েই প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে।