”সংস্কারের প্রয়োজন আছে, সংস্কার বিবেচনাযোগ্য। বিস্তর আলোচনার পর যদি ঐকমত্য হয়, তখন সংবিধান সংশোধন করা যায়,” বলেন তিনি।
Published : 27 Feb 2025, 11:14 PM
সংবিধান পুনর্লিখন একটা ‘ভুল ধারণা’ বলে মনে করেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সরকারের পালাবদলের পর সংবিধান সংশোধন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে ’৭২ এর সংবিধান ও প্রস্তাবিত সংস্কার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি।
কামাল হোসেন বলেন, এতদিন এই সংবিধানের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয়েছে। জনগণ মেনে নিয়েছে। সেটা ফেলে দিয়ে নতুন একটা সংবিধান করা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।
“সংবিধানকে ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান করা-এটা সংস্কার নয়, এটা সংবিধানকে ধ্বংস করার একটা পথ। সংবিধান পুনর্লিখন একটা ভুল ধারণা। সংস্কারের প্রয়োজন আছে, সংস্কার বিবেচনাযোগ্য। বিস্তর আলোচনার পর যদি ঐকমত্য হয়, তখন সংবিধান সংশোধন করা যায়।”
তিনি বক্তব্য দেওয়ার আগে তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।
সংগ্রামের মধ্যদিয়ে জনগণের আকঙ্ক্ষার ভিত্তিতে আমাদের সংবিধান গঠিত হওয়ার কথা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে কামাল হোসেন বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন ও সংশোধনে যেন দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন হয়; এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন সংবিধানকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে। সংবিধান পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ যেন কোনো সংকীর্ণ স্বার্থে নেওয়া না হয়।”
এ সংশোধন ব্যাপক পরামর্শ ও জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্যথায় সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন ও সংশোধন কোনো জাতীয় কল্যাণ বয়ে আনবে না।”
সংবিধানের ব্যাপক সংশোধন না করে অল্প অল্প করে পর্যায়ক্রমে ভালোর দিকে যেতে হবে বলে মনে করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছে, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বাস্তবতায় গণতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দলগুলো পা রাখার মত মাটি দ্রুত পাবে না।
তিনি বলেন, “বিগত ৫৩ বছর বিচার করলে রাষ্ট্রধর্ম আর ধর্মনিরপেক্ষতা-দুটি কথাই সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া উচিত। গণতন্ত্রের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা আসতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা ব্যবহার না করে অন্যভাবে এগোতে পারলে ভালো।”
আলোচনায় সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সংবিধান সংস্কার কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ফেলে দেওয়ার প্রস্তাবের ফলে ধীরে ধীরে ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তির উত্থান হচ্ছে; যা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে হবে, না হলে দেশে শান্তি আসবে না।
যারা সংবিধান সংস্কার করছেন তারা কোন ক্ষমতাবলে আর কোনো যোগ্যতায় এ সংশোধন প্রস্তাব দিয়েছেন তা জানতে চান আবু সায়িদ।
তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ারও সমালোচনা করেন।
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারি ও গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি সুপ্রিম কোর্টে শাখার সভাপতি এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক।