পুলিশের হস্তক্ষেপে তুরিনের ভাই দলবল নিয়ে চলে যান। ওই বাড়ির একটি তলায় তুরিনের পরিবারের সদস্যরা থাকেন এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া।
Published : 08 Apr 2025, 11:22 PM
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ গ্রেপ্তারের পরদিন একদল ব্যক্তি নিয়ে তার ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ রাজধানীর উত্তরার বাড়ি ‘দখলের চেষ্টা’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশির উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে ছয় তলা বাড়িটি নিজের দাবি করে সবাইকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন তুরিনের মেয়ে তেজস্বী তুরিন সুমেধা।
বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর এবং ‘নেইমপ্লেট’ সরিয়ে ফেলার অভিযোগও করেন তিনি।
ওই বাড়ির একটি তলায় আইনজীবী তুরিন আফরোজের পরিবারের সদস্যরা থাকেন এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হস্তক্ষেপ করলে শিশির দলবদল নিয়ে বাড়িটি থেকে চলে যান। এ ঘটনার পর পুলিশের তরফে গ্রেপ্তার তুরিনের ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে ‘অভয়’ দেওয়া হয়; নতুন কোনো সমস্যা হলে পুলিশকে অবগত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওই বাড়ি থেকেই সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলায় তুরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার আদালতে হাজিরের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে চার দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ওই বাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৎ ভাই শিশিরের সঙ্গে মামলা চলছে তুরিন আফরোজের।
এ নিয়ে আদালতের রায়ের পর আপিলের প্রেক্ষিতে সবশেষ গত ১২ মার্চ পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।
তুরিনের মেয়ে তেজস্বীর অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশির আরও অন্তত ১০ জনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ‘দারোয়ানকে মেরে তাড়িয়ে দেন’ এবং অন্যদের বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
“আজ সকালে উনি (শিশির) বাসায় গিয়ে বলতে থাকেন মামলা উনি জিতেছেন। অথচ আমাদের মামলার ডেট এপ্রিলের ৩০ তারিখ। তখন আমি বাসায় ছিলাম না, একটু কাজে বের হয়েছিলাম। তার মধ্যে আমার বাসায় প্রায় ১০ জনের মত এসে অ্যাটাক করেছে।”
এ খবর শুনে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার তথ্য দিয়ে তিনি ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনা দেন। বলেন, “তাড়াতাড়ি এসে বাসার সাইডে রিকশাটা রাখতে বললাম। তারমধ্যে হয়ত তার কোনো লোক আমাকে দেখে ফলো করে শিশির সাহেবকে ডাকল। আমি তারপর চিন্তা করলাম থানাতে যাই। থানাতে যাওয়ার জন্য রিকশা চালককে বললে তিনি রিকশাওয়ালাকে থামায়ে দিয়ে বললেন, আমার সাথে কথা বলবে। আমি ওনার সাথে বারবার বলেছি যে, আমি আপনার সাথে কোনও কথা বলতে চাই না। উনি তারপরও জোর জবরদস্তি করে আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলেন।
“আমার অভিভাবক নিয়ে প্রশ্ন করছিলেন। আমাকে এখন কে দেখবে?“
এসময় ভাড়াটিয়াদেরও তার মামা শিশির হুমকি দিয়েছেন অভিযোগ করে তেজস্বী বলেন, “৩০ সেকেন্ডে আপনারা বের হয়ে যাবেন। ৩০ সেকেন্ডে একটা মানুষের কি বের হওয়া পসিবল? উনি এভাবে কেন আমাদের ভাড়াটিয়াদের থ্রেট করবে?”
এরপর তুরিনের মেয়ে খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তেজস্বীর ভাষ্য, “পুলিশ ওনাদেরকে ওয়ার্নিং দিল। আমাকে পুলিশ বলেছে যে আপনি নিশ্চিন্তে থাকবেন, কোনও প্রবলেম হলে আমাদেরকে কল দেবেন।”
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার সাদ্দাম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তুরিন আফরোজ যে বাসায় থাকতেন সেই বাসা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ নিয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আজ শিশির নামে ওই ভদ্রলোক ওই বাসায় গিয়েছিল। বাসার মালিকানা দাবি করলেও তিনি সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, যেহেতু মামলা চলমান রয়েছে।
”আমরা ওনাকে বলেছি নিজেদের সমস্যা থাকলে সেটা কোর্ট ডিসাইড করবে। বাড়ির মালিক হয়ে থাকলে প্রপার ডকুমেন্টস দেখান। গতকাল ওনি গ্রেপ্তার হয়েছে এখন একটা মেয়ে আছে জোর করে বাসা দখল করতে কেন এসেছেন জিজ্ঞাসা করেছি।”
এরপর দলবদলসহ শিশিরের চলে যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনে বলেন, “আমরা ওনার মেয়েকে আমার নম্বরসহ আমাদের টহল টিমের নম্বর দিয়ে এসেছি। কোনও সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি।”
এ বিষয়ে শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
তুরিনের মেয়ে তেজস্বী বলেন, তার মা ও মামা দুই ভাই বোন, যাদের মধ্যে তার মা বড়। তার নানা মারা গেছেন। তুরিন আফরোজ তার মায়ের এক সন্তান এবং তার সৎ মায়েরও একমাত্র সন্তান শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ।
এ বাড়ি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে তেজস্বী বলেন, “আমার নানার দুটো বাসা- একটা হাতিরপুলে, আরেকটি উত্তরার এটি। হাতিরপুলের বাসা শিশির মামাকে দিয়েছে এবং উত্তরার বাসাটা আমার মাকে দিয়েছে। এরপর ওনারা (শিশির) জাল কাগজ কোর্টে প্রেজেন্ট করে ক্লেইম করতে চাচ্ছে এই বাসাটা ওনার।“
যা নিয়ে মামলা
উত্তরার এ বাড়ি নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে আদালতে বিচারাধীন মামলার খবর অনুযায়ী, তুরিন আফরোজ ২০১৭ সালের ১১ মে মামলাটি করেছিলেন।
ঢাকার দেওয়ানি আদালতে করা এ মামলায় সৎ মা শামসুন্নাহার ও সৎ ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজকে বিবাদী করা হয়।
আরজিতে তার দাবি, উত্তরার বাড়ির মালিক তিনি এবং তার দখলে রয়েছে। তার ভাই শিশির ও মা শামসুন্নাহার মালিক না হয়েও দখল নিতে বেআইনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। এক বছর পর ২০১৮ সাল বাদীপক্ষের আবেদনে বাড়িটি নিয়ে স্থিতাবস্থা দেয় আদালত।
অপরদিকে আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে শিশিরের দাবি, তার বাবা তসলিম উদ্দিন কখনও তুরিনকে এ বাড়ি দান করেননি। তার মা শামসুন্নাহার তাকে (শিশির) এ সম্পত্তি দান করেছেন। পরে ঋণ নিয়ে তিনি বাড়ি করেন এবং ভোগ দখলে ছিলেন।