“এসব বাধা প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রবৃদ্ধির সক্ষমতাকে আটকে দিচ্ছে।”
Published : 08 Apr 2025, 10:34 PM
বিদ্যুৎ সংকট, অর্থ সহায়তা পাওয়ার কম সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাত ও বেশি কর হারকে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশের জন্য প্রধান পাঁচ বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের পথ তুলে ধরার জন্য তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব বাধা চিহ্নিত করা হয়।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ব্যবসার ক্ষেত্রে এসব বাধা প্রতিশ্রুতিশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রবৃদ্ধির সক্ষমতাকে আটকে দিচ্ছে। এর সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ খাতেই কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ আধিপত্য তৈরি করছে।
“আর প্রতিশ্রুতিশীল ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বড় হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং কিছু ছোট দুর্বল প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।”
ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সঙ্গে বেসরকারি খাত নিয়ে একটি অধিবেশন ছিল।
এতে ‘কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক’ (সিপিএসডি) শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন-আইএফসি এর বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল অঞ্চলের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান।
বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ মনে করছে, বাংলাদেশ যদি চারটি খাতে জরুরি সংস্কার বাস্তবায়ন করে, তাহলে তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে এবং এর ফলে লক্ষাধিক চাকরি সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ প্রতি বছর ২ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন চাকরি সৃষ্টি করতে পারে, যেগুলি নির্মাণ শিল্পের মাধ্যমে নতুন আবাসন ইউনিট নির্মাণে সহায়তা করবে। এছাড়া গৃহস্থালি ও শিল্পখাতে ব্যবহৃত রঙ উৎপাদন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৬ লাখ ৬৪ হাজারটিরও বেশি আনুষ্ঠানিক চাকরি সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া ডিজিটাল আর্থিক সেবা খাত সংস্কারের মাধ্যমে ৯৬ হাজার থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার নতুন চাকরি তৈরি হতে পারে বলে এতে তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের এই প্রতিবেদনে এমন চারটি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পরিবেশসম্মতভাবে তৈরি পোশাক উৎপাদন; মধ্য আয়ের পরিবারের জন্য আবাসন; রঙ উৎপাদন ও ডিজিটাল আর্থিক সেবা-যেখানে নীতিগত পদক্ষেপগুলো বেসরকারি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্য নিয়ে সোমবার চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হয়েছে।
বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে আলোচনা আর মতবিনিময়ের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসার পরিবেশ দেখার সুযোগও রাখা হয়েছে।
প্রথম দিন প্রায় ৭০ জন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর একটি দল চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) এবং মীরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখেছেন।
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের গবেষণা তথ্যগুলো বাংলাদেশে বেসরকারি খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগত এবং কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণের দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সুবিধাজনক ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি এবং উদীয়মান শিল্পের সম্প্রসারণে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মাধ্যমে চাকরি সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে এ প্রতিবেদন বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
মার্টিন হোল্টম্যান বলেন, “বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশ হিসেবে আইএফসি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চালিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রতিবেদনে তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “সিপিএসডি একটি গুরুত্বপূর্ণ রোডম্যাপ প্রদান করে থাকে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কৌশলগত রোডম্যাপ, যে খাতগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রধান যে সংস্কারের প্রয়োজন তা তুলে ধরা হয়েছে।
একসাথে কাজ করে আমরা চাকরি এবং সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি যা বাংলাদেশের মানুষের জীবিকা উন্নত করতে এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।”
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর একটি প্যানেল আলোচনা হয়েছে, যেখানে প্রতিবেদনটির ওপর আলোচনা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনা করেন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও কামাল কাদীর, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন, অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চেয়ারম্যান শরীফ জহির, এবিসি রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রাবন্তী দত্ত।