রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “যারা দুর্নীতিবাজ, মানিলন্ডারার, তারা শুধু আমাদের সম্পদ চুরি করছে না, তারা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত চুরি করছে এবং আমাদের স্বপ্ন চুরি করছে।”
Published : 28 Nov 2023, 01:53 PM
অর্থ পাচারের অভিযোগে বংশাল থানার মামলায় ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক এনু এবং তার ভাই রুপন ভূঁইয়াকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার ৮ নম্বর বিশেষ জজ মো. বদরুল আলম ভূঞা মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই ভাইকে ৫২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে এনু ও রুপনের জব্দ করা অপ্রদর্শিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে রায়ে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে বাসায় সিন্দুকভর্তি কোটি কোটি টাকা পাওয়ার ঘটনায় এ নিয়ে দ্বিতীয় মামলায় সাজার রায় এল আলোচিত দুই ভাই এনু ও রুপনের বিরুদ্ধে। তাদের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেছেন, এ রারে বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন।
এনু-রুপন ছাড়াও আরো ছয়জন আসামি ছিলেন এ মামলায়। অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন বিচারক।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- শহীদুল হক, মো. রশিদুল হক ভুঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, পাভেল রহমান, মো. মেরাজুল হক শিপলু ও ভুলু চন্দ্র দেব। তাদের মধ্যে মেরাজুল হক শিপলু ও ভুলু চন্দ্র দেব পলাতক।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “যারা দুর্নীতিবাজ, মানিলন্ডারার, তারা শুধু আমাদের সম্পদ চুরি করছে না, তারা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত চুরি করছে এবং আমাদের স্বপ্ন চুরি করছে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত তাদের আইনের আওতায় আনতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করা।
“এটা সত্য, এ দেশের মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করে। তবে আমাদের উচিত তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা।”
ঢাকার ক্রীড়াক্লাব গুলোতে ক্যাসিনো বন্ধে অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা এনু ও রুপন ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।
সেই অভিযানে সিন্দুক ভর্তি কয়েক কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়, যেগুলো জুয়ার টাকায় গড়া সম্পদ বলে ওই সময় র্যাব জানিয়েছিল।
এর মধ্যে এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় দুই কোটি টাকা। ওই ঘটনায় ওয়ারী থানায় র্যাবের করা মামলায় ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল এনু-রুপনসহ ১১ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
অভিযানের মধ্যে এনু ও রুপনের নাগাল পাওয়া না গেলেও ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই বছর ৩১ অগাস্ট বংশাল থানায় মানি লন্ডানিং প্রতিরোধ আইনে আরেকটি মামলা করেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক মো. মেহেদী মাকসুদ, যার রায় এল মঙ্গলবার।
এ মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পান তিনজন। মামলার বিচার চলাকালে মোট ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২০ নভেম্বর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার এনু গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং তার ভাই রুপন ভূঁইয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
পুরনো খবর
এনু-রুপনের আরেক বাড়িতে পাঁচ সিন্দুকে ২৬ কোটি টাকা
‘ভুয়া পাসপোর্টে পালানোর চেষ্টায়’ ছিলেন এনু ও রুপন
ক্যাসিনোকাণ্ডে পলাতক এনু ও রুপন গ্রেপ্তার
সিন্দুকে জুয়ার টাকা: তিন থানায় ৭ মামলা