আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়ার মধ্যে গাজীপুরে এক প্রার্থীকে তলব; মঙ্গলবার খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটে এসপি ডিসিকে চিঠি।
Published : 02 May 2023, 09:47 PM
পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে তৎপরতা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রতীক বরাদ্দের আগেই মিছিল, সভা, আগাম প্রচারমূলক কার্যক্রম চলতে থাকায় প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলছেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসি ‘কড়াকড়ি অবস্থান’ নিচ্ছে।
সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের পক্ষে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের আনাগোনায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ার কথা বলছেন কমিশন কর্মকর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে দল, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করিয়ে দিতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুরে নৌকার মেয়র প্রার্থীকে তলবও করা হয়েছে। এবার প্রশাসন, পুলিশ ও প্রার্থীদেরকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২৫ মে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটিতে এবং তারপর ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট হবে।
এর মধ্যে গাজীপুর সিটিতে মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে। ৯ মে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে সেখানে। খুলনা ও বরিশালে ২৬ মে এবং সিলেট ও রাজশাহীতে ২ জুন প্রচারে নামতে পারবে প্রার্থীরা।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন: যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে ইসির চিঠি
গাজীপুর সিটি নির্বাচন: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীকে সতর্ক করে ইসির চিঠি
গাজীপুরে আচরণ বিধি না মানার প্রবণতার মধ্যে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “নিয়ম-কানুন সবাইকে মানতে হবে। যদি না মানেন রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
“শুরুর দিকে অনেকে জেনেই হোক, না জেনেই হোক, হয়ত কিছুটা আচরণবিধি ভেঙেছেন। ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। এখন আমরা যে ধরনের ম্যাসেজ দিচ্ছি সবাই বুঝতে পারবে তাদের আচরণবিধি মানতে হবে।”
তিনি জানান, আচরণবিধি না মানলে রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নেবেন। আচরণবিধিতে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এরপর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও আছে কমিশনের।
“মনোনয়নপত্র জমা যেহেতু দিয়েছে, এখন তাদেরকে কমিশনেও ডাকা হয়েছে। কমিশন আচরণবিধি প্রতিপালনেও কড়াকড়ি অবস্থান নেবে।”
মনোনয়নপত্র জমার সময় পাঁচ জনের বেশি সঙ্গী নেওয়ায় গাজীপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে ইসি।
আলমগীর বলেন, “আমরা নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শাতে বলেছি আগামী ৭ মে। এক্ষেত্রে তিনি যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেন, তবে তো কোনো সমস্যা নেই। আর যদি না দিতে পারেন, তবে কিছু না কিছু শাস্তি তো হবেই। তবে কী শাস্তি হবে, তা নির্ভর করবে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায়। তিরস্কার যেমন শাস্তি, তেমনি জেল-জরিমানা এবং প্রার্থিতা বাতিলের বিধানও আছে আইনে।”
নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী, এমপিদের ভোটের প্রচারণামূলক সভা, প্রচার শুরুর আগেই কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়ার কথাও জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহীতে ডিসি-এসপিকে ইসির চিঠি
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক বলেন, ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার সময় কোনো কোনো প্রার্থী মিছিল, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বা মহড়া দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আচরণবিধি যথাযথ প্রয়োগ ও প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ইসি নির্দেশনা দিয়েছে।
মঙ্গলবার খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাতে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো মিছিল না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
মিছিল বা শোডাউন সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ ।) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনও প্রকার মিছিল কিংবা শো-ডাউন করা যাবে না বা প্রার্থী ৫ (পাঁচ) জনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না ।
নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রকার মিছিল বা কোনোরূপ শোডাউন করা যাবে না।
যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ। কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান- কোনও ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহনসহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোনও প্রকারের মিছিল বের করতে পারবে না কিংবা কোনোরূপ শোডাউন করতে পারবে না।
খুলনা ও বরিশালে ১৬ মে এবং রাজশাহী ও সিলেটে ২৩ মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় রয়েছে।
নির্বাচনে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সব প্রার্থীর সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সিটি নির্বাচনেরও আলাদা আচরণবিধি রয়েছে। বিধি না মানলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।
সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও বিধান করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।