মন্ত্রীর একান্ত সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।
Published : 29 Apr 2023, 07:53 PM
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ওই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন বরাবর চিঠিটি পাঠান।
এতে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “একটি সূত্রে অবহিত হয়েছি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মহোদয় ২৯ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় কতিপয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আগমন করবেন।
“সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ২২ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, ওই ধরনের ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারবেন।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “উক্ত বিধিমালার সংজ্ঞায় ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ অর্থ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বুঝানো হয়েছে।”
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “বিষয়টি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে সদয় অবগত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।”
‘নৌকা থেকে যারা নেমে যায়, রাজনৈতিকভাবে তারা হারিয়ে যায়’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, “নৌকা থেকে যারা নেমে যায়, রাজনৈতিকভাবে তারা হারিয়ে যায়। কাজেই দলের সাথে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজীপুর শহরের তেলিপাড়া এলাকায় সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে বাসন থানা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে এক যৌথ কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন বাসন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম।
কর্মিসভায় মন্ত্রী আরও বলেন, “সব সময় সবার সব প্রত্যাশা কি পূরণ হয়?”
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তিনিও (মিজানুর রহমান) নৌকা থেকে নেমে গিয়েছিলেন; হালে পানি পাননি, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছেন।
“এ দেশের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী, বঙ্গবন্ধু যাকে স্নেহ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছিলেন, আইনমন্ত্রী বানিয়েছিলেন তিনি ড. কামাল হোসেন। তিনিও নৌকা ছেড়ে অন্য দল করেছেন। তিনি এখন জীবিত থেকেও রাজনৈতিকভাবে মৃত। ব্যক্তি জীবনে তিনি জীবিত, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তার কী অবস্থা তা আপনারা জানেন। আমাদের আরেক প্রিয় নেতা রাজ্জাক ভাই, যার হাত ধরে আমরা ছাত্রলীগ করেছি। যিনি আমাদের নিয়ে মিটিং-মিছিল করেছেন, রাজপথ কাঁপিয়েছেন তিনিও একবার বাকশাল করলেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে কাঁচি মার্কা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য। বাকশাল করে হারিয়ে গিয়েছিলেন। আবার আওয়ামী লীগে ফেরত এসে তার শেষ রক্ষা হয়েছিল। অর্থাৎ নৌকা থেকে যারা নেমে যায় রাজনৈতিকভাবে তারা হারিয়ে যায়। কাজেই দলের সঙ্গে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হচ্ছে
সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আতাউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
আমরা নির্ধারিত সংখ্যক লোকবল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে আমাদের আচরণ বিধি মেনে চলার সতর্ক করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। অথচ অন্যন্য দলের প্রার্থীরা মিছিল, শোডাউন এবং দলীয় কর্মিসভার আড়ালে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তাদের কোনো শোকজ করা হয়নি। এতে আমরা শঙ্কিত নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠ-নিরপেক্ষ হবে কি না?
তিনি নির্বাচন কমিশনকে সকলের ক্ষেত্রে সমান দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তবে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কোনো প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।