সংঘর্ষে ৬ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা গুরুতর।
Published : 26 Aug 2024, 01:34 PM
আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সবকটি গেইট এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সেনাবাহিনী।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার আনুমানিক ১০ হাজার আনসার সদস্য একত্রিত হয়ে সচিবালয় ঘেরাও করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৭ জন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখে।
"উত্তেজিত আনসার সদস্যদের শান্ত করার জন্য বিকেলে মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি সচিবালয়ে আসেন এবং আনসার সদস্যদের সব দাবি মেনে নেন। এরপরও উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা ত্যাগ না করে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং কিছু আনসার সদস্য সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।
“এ সময় উত্তেজিত আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সচিবালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর টহলের উপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠি দিয়েও আঘাত করে। এসময় ৬ জন সেনাসদস্য আহত হয় এবং তাদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা গুরুতর।”
আইএসপিআর বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে মোতায়েন করা সেনা সদস্যরা ‘ধৈর্য’ ধারণ করে।
“উত্তেজিত আনসাররা নিবৃত্ত না হলে আকাশের দিকে ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরবর্তীতে সচিবালয় এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”
এরপর সচিবালয়ে অবরুদ্ধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৭ উপদেষ্টা, আনসারের মহাপরিচালক, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর সহায়তায় সচিবালয় এলাকা নিরাপদে ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে, সেখানে মোতায়েন থাকা সেনাসদস্যরা সচিবালয়ে অনুপ্রবেশকারী এবং পরবর্তীতে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা কারা কিছু সংখ্যক আনসার সদস্যকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পরে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে পেশাজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার মাঠে নামে আনসার সদস্যরা। তারা আর দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে কাজ করতে তারা রাজি নন, চাকরি জাতীয়করণ করার দাবি তাদের।
রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। তাদের সমাবেশের কারণে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পুরো এলাকায়।
পরে বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান।
ওই বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আনসার থেকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও তাতে আশ্বস্ত না হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন আনসার সদস্যরা। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, অফিস শেষের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশিরভাগই সেখান থেকে বের হতে পারেননি।
এই অবস্থায় রাত পৌনে ৮টার দিকে সচিবালয়ে পাঁচ জন উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আনসার বাহিনীর ১০ জন প্রতিনিধিও সেখানে যোগ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াও ছিলেন।
রাত পৌনে ১০টার দিকে সচিবালয়ের বাইরে শিক্ষার্থী ও আনসারদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থী ও পুলিশ মিলে আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ওই এলাকা থেকে। রাতে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনী। পরে দিনভর সচিবালয়ে অবরুদ্ধ থাকা ব্যক্তিরা বেরিয়ে আসেন।
সংঘর্ষে ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী আনসারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যিবরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পুরনো খবর-
সচিবালয়ের সামনে আনসার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
আনসারদের ঘেরাও: সচিবালয়ে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
আনসারের দাবি: জরুরি বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী আনসারদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার দাবি