রেস্ট প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানালেও তা মানছেন না আনসার সদস্যরা, তার সচিবালয় ঘেরাও করে অবস্থান করছেন জাতীয়করণের দাবিতে।
Published : 25 Aug 2024, 07:03 PM
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আনসার সদস্যদরা সচিবালয় ঘেরাও করে রাখায় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, অফিস শেষের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশিরভাগই সেখান থেকে বের হতে পারেননি।
চার দিন ধরে আন্দোলনে থাকা আনসার সদস্যরা রোববার সকাল থেকে সচিবালয়ের সব গেইটের মুখে অবস্থান নেন। জাতীয়করণের দাবি পূরণ করেই ঘরে ফেরার কথা বলছেন তারা।
ঘেরাওয়ের এক পর্যায়ে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আনসার থেকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“একই সাথে অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি কমিটি করা হবে৷ এই কমিটি সব কিছু পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে৷ সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব৷”
সচিবালয়ের এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা যায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং কয়েকজন আসনার সদস্যকে।
বৈঠকে ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও সে তথ্য পেয়েও মূল দাবি থেকে সরেননি আনসার সদস্যরা। তারা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের দাবি একটাই- চাকরি জাতীয়করণ।
তাদের অবস্থানের কারণে সচিবালয়ের সব গেইট বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেক দর্শনার্থী সেখান থেকে বের হতে না পেরে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেইট অর্থাৎ প্রেস ক্লাবের দিকের গেইটে দেখা যায়, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বের হয়ে যাচ্ছেন। পরে সেটি আবার অবরোধ করা হয়।
সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় ছোট বাচ্চা আছে৷ আমাদের এভাবে অবরুদ্ধ করে রেখে তাদের কী লাভ? আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই?”
জাতীয়করণের দাবি নিয়ে সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভে রয়েছেন আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে দুপুরে ১টার দিকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে ৩ নম্বর গেইট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েন।
অর্ধশতাধিক আনসার ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গেটটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়। আনসাররা ভেতরে ঢুকে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
সেখানে আনসারদের বলতে শোনা যায়, “হয় আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করেন না, হয় আমাদের মেরে ফেলেন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন খাতের বঞ্চিতরা সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছেন। এজন্য বিভিন্ন সময়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ থাকতে হচ্ছে।
এদিকে সচিবালয়ে বৈঠকের পর কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা তিন উপদেষ্টা এবং অন্যান্য সহকর্মী সবার সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এখন থেকে আনসারে ‘রেস্ট প্রথা’ থাকবে না।
রেস্ট প্রথা নিয়ে এক প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রতি তিন বছর চাকরির পর আনসার সদস্যদের ছয় মাস রেস্টে থাকা লাগে৷ এই ছয় মাস পর তারা আবার জয়েন করেন৷
“এই সময়ে তাদের খুব মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়৷ নিয়োগ বিধিমালা থেকে এই প্রথা বাতিল করে কীভাবে তাদের চাকরিতে রেগুলার করা যায়, সে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে৷ সাধারণ আনসারদের মধ্যে চারজন প্রতিনিধি নিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে তারা একটি সুপারিশ দেবেন৷”
এ সময় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “যেহেতু একটি কমিটি হয়েছে সেহেতু বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
“আমাদের একটি জাতীয় সংকট চলছে, অনেক দিকে কাজ করা লাগছে৷ এই দুর্যোগকালীন সময়েও এই কমিটি সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে৷
আনসার ভাইদের যেসব সমস্যা, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানে আমরা পৌছাব৷”
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আনসার সদস্যদের সচিবালয়ের সব গেইটের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সচিবালয়ের বাইরে একজন আনসার সদস্যকে বলতে শোনা যায়, “চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণ না হলে তাদের আন্দোলন চালবে, শুধু রেস্ট প্রথা বাতিল করলেই হবে না। আমাদের দাবি জাতীয়করণ “
আনসার সদস্য সাহবাজ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের প্রতিনিধিদের মিটিংয়ে উপদেষ্টারা রেস্ট প্রথা বাতিলের কথা জানালেও আমরা এটা মানি না৷ আমরা চাই জাতীয়করণ৷ আমাদের এক দফা৷ এ দাবি মানতেই হবে৷ দাবি না মানলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না৷"