“আনসার সদস্যদের দাবি দাওয়া নিয়ে এ বৈঠক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে”, বলেন একজন কর্মকর্তা।
Published : 25 Aug 2024, 09:01 PM
চাকরি জাতীয়করণ দাবিতে আনসার সদস্যদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে সচিবালয়ে পাঁচ জন উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সেখানে যোগ দিয়েছেন আনসার বাহিনীর ১০ জন প্রতিনিধিও।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার রাত পৌনে ৮ টায় এ বৈঠক শুরু হয়৷
বৈঠকে যোগ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াও অপর উপদেষ্টার পরিচয় জানা যায়নি।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “চাকরি জাতীয়করণ করতে আইনি প্রক্রিয়া এবং সংকট নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা আছে। আনসার সদস্যদের দাবি দাওয়া নিয়ে এ বৈঠক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷ তবে তারা যেসব বিষয় তুলছেন, সেগুলো মেনে নিতে সরকারের কিছুটা সময় লাগবে।”
সচিবালয়ের বাইরে থাকা আনসার বাহিনীর একজন সদস্য বলেন, “আমরা এখনও রাস্তায় আছি, তারা আবার বৈঠকে ডেকেছেন, দেখি কী বলে।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর বিভিন্ন পেশার মানুষদের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে বুধবার মাঠে নামে আনসার সদস্যরা।
আর দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে কাজ করতে রাজি নন তারা; চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আনসার সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫৪০ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন। বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য রেশন সুবিধা বরাদ্দ থাকে।
সারা দেশে আনসারের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এরমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। বাকি ১৫ হাজার সদস্য ‘রেস্ট টাইমে’ থাকেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের নতুন চাহিদা পেলে কিংবা আগের কোনো প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদের পাঠানো হয়। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন দায়িত্বেও পাঠানো হয় ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদেরকে।
গত বুধবার আনসার সদস্যরা চাকরি জাতীয়করণের দাবি নিয়ে রাজপথে নামে। সেদিন তারা ঢাকায় শাহবাগ এবং বিমানবন্দর মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এরপর থেকে প্রতিদিনই চলছে তাদের বিক্ষোভ।
এই অবস্থানের মধ্যে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে আনসার সদস্যদের কিছু দাবি ‘যৌক্তিক’ মেনে নিয়েই কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগদানের আহ্বান জানায়।
আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ দাবির বিষয়ে একটি ‘যৌক্তিক সমাধান’ হবে।
এই কমিটি দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা করে যৌক্তিক সুপারিশ করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। পরে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সেই সুপারিশ পরীক্ষা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
তবে রোববার সকাল ৮টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন আনসার সদস্যরা। তাদের সমাবেশের কারণে তোপখানা রোড থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা ছড়িয়ে পড়েন পুরো এলাকায়।
আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা কয়েকবার বিদ্যুৎ ভবনের পাশের গেইট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাদের ঘেরাওয়ের কারণে সচিবালয় থেকে কেউ বের হতে বা প্রবেশ করতে পারেননি।
পরে বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে যান।