সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা দেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম।
Published : 19 May 2015, 08:15 PM
সাগরে আটকেপড়াদের রক্ষার আহ্বান
নৌকায় ভাসমান রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব অস্বীকার মিয়ানমারের
সাগরে সঙ্কট: বোঝাই নৌকা ফেরত পাঠাচ্ছে মালয়েশিয়া
অভিবাসীদের উদ্ধারের জাতিসংঘ আহ্বানে সাড়া নেই
মানবপাচার: ৩০০ জনের তালিকা ধরে অভিযান
মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে শ’শ’ বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা
দুই হাজার উদ্ধার, সাগরে ‘আটকা’ বহু অভিবাসী
এ সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ের মুখপাত্র আসিফ মুনীর মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ পেয়ে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে আইওএম।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় আটক বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরিতে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক সপ্তাহে ওই তিন দেশে দুই থেকে তিন হাজার বাংলাদেশি আটক হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এলেও এর সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে না পারলেও মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, “সাগরে ভাসমান সবাই বাংলাদেশি নয়। বাংলাদেশি থাকলেও সংখ্যায় তারা অল্প।”
তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে যারা পাচারকারীদের নৌকায় করে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা থাইল্যান্ডে ভিড়তে পেরেছেন, তাদের মধ্যে অন্তত ১৪ শ’ বাংলাদেশি ছিলেন।
মিয়ানমারে নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরে বাঁচার আশায় সাগর পাড়ি দিয়ে আশেপাশের দেশ, বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। আর বাংলাদেশ থেকেও নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। মানবপাচারকারীরা এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে।
গতমাসের শেষে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের পরিত্যক্ত এক ক্যাম্পে অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
থাই পুলিশ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় এবং মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় নৌবাহিনী কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পাচারকারীদের আরও বহু নৌকা সাগরে আটকে আছে বলে শঙ্কা তৈরি হয়। এতে অন্তত ৮ হাজার মানুষ সাগরে আটকা পড়েন বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ধারণা।
গত কয়েক দিনে ওই তিন দেশের নৌবাহিনী মানুষবোঝাই বেশ কিছু নৌকা উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে গভীর সাগরে ঠেলে দেয়, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
‘পুশ ব্যাক’ বন্ধ করে সাগরে বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার এবং তাদের জন্য বন্দর খুলে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।
আইওএম মুখপাত্র আসিফ মুনীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আটকেপড়াদের যে তালিকা হচ্ছে তা বাংলাদেশেও পাঠানো হবে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আইওএম বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা দেবে।
“লিবিয়া সঙ্কটের পর শরণার্থীদের সহায়তা দিতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব ছিল। এই তহবিল থেকে ১০ লাখ ডলার আটকেপড়াদের ফেরাতে ও তাৎক্ষণিক সেবা এবং আইনগত সহায়তা দিতে ব্যয় করার কথা ভাবা হচ্ছে।”
নৌপথে রওনা হতে পারেননি, এমন ২ হাজার মানুষ মিয়ারমার সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় আটকা পড়ে আছেন বলেও জানান তিনি।
“এদেরকে উদ্ধারে কাজ করছে কোস্ট গার্ড ও বিজিবি। প্রতিদিন দুই-একজনকে উদ্ধার করে টেকনাফে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রয়োজনে আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সরকার মানবপাচারকারীদের কোনো ধরনের ছাড় দেবে না।
“মানবপাচার রোধে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের অরক্ষিত প্রায় আড়াইশ কিলোমিটির এলাকায় বিজিবি মোতায়েনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্ত আরও সুরক্ষিত করার কাজ চলছে।”
মানব পাচাররোধে সমুদ্রে মাছ ধরার জেলেদের পরিচয়পত্র এবং মালামাল পরিহনকারী ট্রলারগুলোকে নম্বর প্লেট দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), মানবাধিকার বিষয় হাই কমিশনার (ওএইচসিএইচআর), আইওএম এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির কার্যালয়ের (এসআরএসজি) এক যৌথ বিবৃতিতে সাগরে ভাসমান মানুষদের জীবন বাঁচাতে তিন দেশে তাদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “কোনো ধরনের খাবার, পানি এবং চিকিৎসা ছাড়া নারী-শিশু ও পুরুষদের নৌকায় ভাসার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। তাদের নিরাপদে অবতরণের সুযোগ দিয়ে জীবন বাঁচানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”