অর্থ আত্মসাৎ: সোনালীর সেই এমডি হুমায়ুনসহ ১১ জনের কারাদণ্ড

প্রতারণার মাধ্যমে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবীরসহ ১১ ব্যাংকার ও ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2021, 02:07 PM
Updated : 26 Dec 2021, 02:19 PM

রোববার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

দুদকের দায়ের করা এ মামলায় দণ্ডিতদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রীয় সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) হুমায়ুন কবীর এবং সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক।

তারা এ ব্যাংকের আরেক আলোচিত ঋণ জালিয়াতির ঘটনা হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সময়েও দায়িত্ব ছিলেন।

হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে দায়ের করা দুদকের বিভিন্ন মামলাতেও তারা আসামি। ওই সময় বরখাস্ত এমডি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তারে আদালত আদেশ দিলেও তিনি পলাতক রয়েছেন।  

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় হুমায়ুন দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের এমডি ও সিইওয়ের দায়িত্বে ছিলেন; যিনি এ রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন। তবে মাইনুল হক কারাগারে রয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় ব্যাংকার হলেন- মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান ও ননী গোপাল নাথ, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও মো. সফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজিএম সাইফুল হাসান ও কামরুল হোসেন খান।

এদের মধ্যে ননী গোপাল নাথ ও সাইফুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

বাকি তিন জন হলেন- ডিএন স্পোর্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী ও তার মেয়ে পরিচালক ফাহমিদা আক্তার এবং কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুর রহমান।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর রায়ের তথ্য জানিয়ে বলেন, মামলা চলাকালে দণ্ডিত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বরখাস্ত ছিলেন।

রায়ে সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন আট কর্মকর্তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাভোগ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

অপর তিন ব্যক্তিকে প্রতারণায় সহযোগিতার অভিযোগে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এক কোটি ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে আদেশ দেন বিচারক।

রায়ে একই সঙ্গে এক কোটি ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত এবং বিধি মোতাবেক সমহারে আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রতারণার অভিযোগে তাদের আরও পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে।

এ তিন আসামির সাজা একত্রে চলবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন বিচারক। সেক্ষেত্রে তাদের পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী।

রায়ে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ২৭ মে এর মধ্যে রমনা থানাধীন সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে ডিএন স্পোর্টস এর নামে ঋণ (পারসোনাল সিকিউরড ক্রেডিট- পিএসসি) নিয়ে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

এ অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি ১৬ জনকে আসামি করে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত শেষে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৪ সালের ২২ মে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে এক কোটি ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪ টাকা আত্মসাতের তথ্য উঠে আসে।

২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

মামলাটির বিচার চলাকালে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত মোট ৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জন সাক্ষ্য দেয়।