মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে কাত হয়ে উল্টে যাওয়া ফেরি ‘শাহ আমানতকে’ উদ্ধারে সময় লাগবে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেছেন, সেজন্য বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছেন তারা।
Published : 29 Oct 2021, 07:06 PM
শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, এখন ফেরি উদ্ধারের চেয়ে ডুবে যাওয়া পণ্যবোঝাই ট্রাক ও মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধারে জোর দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ।
পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান চলে। ডুবে যাওয়া পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারীকর্মীরা সেখানে কাজ করছেন।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে বুধবার সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল শাহ আমানত। পদ্মা পার হয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পরপরই সেটি কাত হয়ে নদীতে উল্টে যায়।
দুর্ঘটনার সময় ফেরিতে ছিল ১৭টি ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান, একটি প্রাইভেটকার ও আটটি মোটরসাইকেল। এর মধ্যে তিনটি গাড়ি ঘাটে নেমে যেতে পারলেও বাকি বাহনগুলো ফেরির সঙ্গেই নদীতে ডুবে যায়।
বিআইডব্লিউটিএ এর উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা বুধবার সকালেই আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় গিয়ে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু ৮০০ মেট্রিক টনের ফেরি শাহ আমানতকে উদ্ধার করার ক্ষমতা ৬০ মেট্রিক টনের হামজার না থাকায় খবর দেওয়া হয় আড়াইশ টনের প্রত্যয়কে।
সেই জাহাজটি শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ার কাছাকাছি আসার পর গতি, পদ্মাসেতুর ঝুঁকিসহ নানা কারণ দেখিয়ে সেটাকে ফেরত পাঠানো হয়। তার বদলে পাটুরিয়ায় পাঠানো হয় মাদারীপুরে থাকা রুস্তমকে।
হামজার মত রুস্তমের ক্ষমতাও ৬০ মেট্রিক টন। অপর উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক বরিশালে অবস্থান করছে। ক্রেনবাহী উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিকের ক্ষমতাও ২৫০ মেট্রিক টন।
আটশ মেট্রিক টনের ফেরি শাহ আমানতকে তোলার সক্ষমতা বিআইডব্লিউটিএর আছে কিনা জানতে চাইলে গোলাম সাদেক বলেন, “বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে কথা হচ্ছে। দেখা যাক তারা (বেসরকারি কোম্পানি) পারে কিনা। তাদের সক্ষমতা রয়েছে কিনা। তাদের সক্ষমতা দেখেশুনে চুড়ান্ত চুক্তি করব।”
তবে ফেরি উদ্ধারে ‘সময় লাগবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ফেরি যেখানে কাত হয়ে রয়েছে, তার আশপাশের মাটি কাটতে হবে। তারপর ওঠানো ... তাই সময় লাগবে।”
কতদিনে তা সম্ভব হতে পারেম সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারননি বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এ ঘটনা তদন্তে গঠিত দুটি কমিটি। কমিটির সদস্যরা ভুক্তভোগী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের রো রো ফেরির এভাবে দুর্ঘটনা পড়া এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। তবে কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ফেরিতে থাকা ট্রাকচালক ও মালিকরা ফেরিতে আগেই পানি ওঠার কথা বলছেন। তাহলে ফেরি পরিচালনাকারীরা কেউ তা দেখল না কেন কিংবা দেখলেও সতর্কবার্তা কেন দিল না-সেই প্রশ্ন উঠছে।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ডেনমার্ক থেকে আনা রো রো ফেরি শাহ আমানত বহরে যুক্ত হয় গত শতকের ৮০ এর দশকে। এর মেয়াদ অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
এ দুর্ঘটনা তদন্তে বিআইডব্লিউটিসি সাত সদস্যের যে তদন্ত কমিটি করেছে, তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুরনো খবর