প্রত্যয় যাচ্ছে না, পাটুরিয়ায় নেওয়া হচ্ছে ‘দুর্বল’ রুস্তমকে

দুদিন অপেক্ষার পর জানা গেল, পাটুরিয়া ঘাটে কাত হয়ে উল্টে যাওয়া ফেরি ‘শাহ আমানতকে’ তুলতে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় আর মানিকগঞ্জে যাচ্ছে না।

মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2021, 09:15 AM
Updated : 29 Oct 2021, 10:43 AM

তার বদলে মাদারিপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে শুক্রবার সকালে পাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, যদিও ৮০০ টনের ফেরি শাহ আমানতকে টেনে তোলার ক্ষমতা এর নেই।

পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান চলছে। ডুবে যাওয়া পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে উদ্ধারে সেখানে কাজ করছেন বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকারীকর্মীরা।

এর আগে পাটুরিয়ায় পৌঁছানো উদ্ধারকারী জাহাজ হামজাও সেখানে আছে। তবে দুর্ঘটনায় পড়া শাহ আমানতকে তোলার কোনো তৎপরতা আপাতত নেই।

সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদিক বলেন, উদ্ধারকাজে অংশ নিতে প্রত্যয়ের পরিবর্তে শিমুলিয়া থেকে রুস্তম আসছে পাটুরিয়ায়। বিকাল নাগাদ রুস্তমের পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

আপাতত ফেরির সঙ্গে ডুবে যাওয়া যানবাহনগুলো উদ্ধারের দিকে জোর দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। ফেরি তোলার জন্য প্রয়োজনে পরে বেসরকারি উদ্ধারকারী জাহাজের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে বলে মত দেন চেয়ারম্যান।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে বুধবার সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল শাহ আমানত। পদ্মা পার হয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পরপরই সেটি কাত হয়ে নদীতে উল্টে যায়।

দুর্ঘটনার সময় ফেরিতে ছিল ১৭টি ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান, একটি প্রাইভেটকার ও আটটি মোটরসাইকেল। এর মধ্যে তিনটি গাড়ি ঘাটে নেমে যেতে পারলেও বাকি বাহনগুলো ফেরির সঙ্গেই নদীতে ডুবে যায়।

এর মধ্যে চারটি পণ্যবাহী ট্রাক, পাঁচটি কভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। শুক্রবার সকালে উদ্ধারকর্মীরা আরেকটি মোটরসাইকেল তুলে এনেছেন বলে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান।

বুধবার ওই দুর্ঘটনার পরপরই ঘাটের ট্রলার চালক ও বিআইডব্লিউটিসির ভাসমান কারখানার লোকজন ফেরির ডুবন্ত ট্রাকচালক ও লোকজনকে উদ্ধার করেন। কেউ নিখোঁজ আছেন এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি।

অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা বুধবার সকালেই আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় গিয়ে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।

কিন্তু ৮০০ মেট্রিক টনের ফেরি শাহ আমানতকে উদ্ধার করার ক্ষমতা ৬০ মেট্রিক টনের হামজার না থাকায় খবর দেওয়া হয় আড়াইশ টনের প্রত্যয়কে।  

বুধবার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পার হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুরের কাছে আমিরাবাত পয়েন্টে নোঙ্গর করে প্রত্যয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রাতে পৌঁছায় শিমুলিয়ার কাছে।

জাহাজটির পদ্মা সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর খুঁটির মাঝখান দিয়ে পাটুরিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতি, পদ্মাসেতুর ঝুঁকিসহ নানা কারণ দেখিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রত্যয়ের বদলে পাটুরিয়ায় পাঠানো হয় মাদারীপুরে থাকা রুস্তমকে।

সাধারণত একটি টাগবোট দিয়ে চললেও এখন দ্রুত গতিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য রুস্তমের সাথে আরও একটি টাগবোট যুক্ত করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় বুধবার সকালে কাত হয়ে উল্টে যাওয়া ফেরি শাহ আমানতকে উদ্ধারে বাঁধা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সঙ্গে। ছবি: গোলাম মর্তুজা অন্তু

উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের মাস্টার মাসুদুল হক বলেন, শুক্রবার রাতের মধ্যেই রুস্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে বলে তার ধারণা।

“প্রত্যয়ের গতি অনেক কম। নারায়ণগঞ্জ থেকে শিমুলিয়া পর্যন্ত আসতেই অনেক সময় লেগে গেছে। এখনও ৭০ কিলোমিটারের বেশি পথ বাকি। এভাবে চলছে পাটুরিয়ার পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে।

“তাছাড়া সাড়ে ১৭ মিটার উচ্চতার ক্রেনবাহী প্রত্যয়কে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে পাটুরিয়ার যেতে হলে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এসব কারণে প্রত্যয়ের পরিবর্তে রুস্তমকে নেওয়া হচ্ছে।”

মাসুদুল হক জানান, হামজার মত রুস্তমের ক্ষমতাও ৬০ মেট্রিক টন। অপর উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক বরিশালে অবস্থান করছে। ক্রেনবাহী উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিকের ক্ষমতাও ২৫০ মেট্রিক টন।