গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক ‘অপ্রীতিকর ঘটনায়’ এ পর্যন্ত ৭১টি মামলা রুজু হয়েছে। আরও কিছু মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন।
এসব হামলা-ভাংচুরে জড়িত সন্দেহে ৪৫০ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সব অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়।
দেশজুড়ে দুর্গাপূজা চলাকালে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে মন্দিরে হামলা ভাংচুরের পর তা আরও কয়েকটি জেলায় ছড়ায়, যাতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে।
কুমিল্লার পর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনীতে হিন্দু সম্প্রদার আক্রান্ত হয়।
সবশেষ রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় ফেইসবুকে এক তরুণের ধর্ম অবমাননার পোস্টকে কেন্দ্র করে। মাঝিপাড়া জেলেপল্লীর ২৯টি বাড়ি ও গোয়াল ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়; ভাংচুর করা হয় মন্দির।
পীরগঞ্জের ঘটনায় সম্পৃক্তদের ‘তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত’ করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪৫ জনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া যে তরুণের কথিত ফেইসবুক মন্তব্য নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল পীরগঞ্জে, সোমবার রাতে তাতেও আটক করা হয়েছে।
এসব হামলা ও সহিংসতার মধ্যে সোমবার ফেনী ও রংপুরের পুলিশ সুপার এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনারসহ এসপি মর্যাদার সাত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
এরপর সোমবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে মামলা ও গ্রেপ্তারের তথ্য দেওয়া হয়, আরেকটি বিবৃতিতে গুজব নিয়ে সতর্ক করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে কতিপয় ব্যক্তি-গোষ্ঠী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব-বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।
“আবার অনেক ক্ষেত্রে চক্রান্তকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট কিংবা বিভিন্ন তথ্য বিকৃত বা অপব্যাখ্যা করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।”
সোশাল মিডিয়ায় গুজব-বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট ‘মনিটর’ করছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।
এতে বলা হয়, “গুজব-বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে এবং অযাচাইকৃত সংবাদ বিশ্বাস না করতে অনুরোধ জানিয়ে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণের সার্বিক সহযোগিতাও প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ পুলিশ।“