বাক স্বাধীনতা ‘কেড়ে নেওয়ার’ অভিযোগ তুলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে আবারও নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
Published : 15 Oct 2018, 12:53 PM
ইভিএম ও বিধি সংশোধন নিয়ে সোমবার বসছে ইসি
ইভিএম নিয়ে আপত্তি, মাহবুব তালুকদারের সভা বর্জন
মাহবুব তালুকদারের আপত্তিতে ‘গণতন্ত্রের বিউটি’ দেখছেন কাদের
সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত ইসির
সোমবার কমিশনের ৩৬তম সভা শুরুর পর ১০ মিনিটের মাথায় তিনি সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে বাকি তিন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান সিইসি নূরুল হুদা।
বেরিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে মাহবুব তালকুদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না।”
তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে’ ৫ দফা প্রস্তাব নিয়ে সভায় বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন এই নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু সেই সুযোগ না পাওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান।
গত ৮ অক্টোবর কমিশনে দেওয়া এক আনঅফিশিয়াল নোটে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে’ ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।
নির্বাচনী দায়িত্বে সেনাবাহিনীর কার্যপরিধি নির্ধারণ, সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন, ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে নিজের মতামত সেখানে তিনি তুলে ধরেন।
সোমবারের কমিশন সভায় ওই বিষয়গুলো নিয়েই বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন কমিশন সদস্য মাহবুব তালুকদার।
নোট অব ডিসেন্টে তিনি লিখেছেন, “নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার অধিকার খর্ব করতে পারে না, বাক স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা আমার সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার।
“এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং প্রতিবাদ স্বরূপ কমিশন সভা বর্জন করছি।”
মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, কমিশন সভায় তাকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেওয়ার বিষয়ে কমিশনারদের ‘অভিন্ন অবস্থান’ তাকে ‘বিস্মিত ও মর্মাহত’ করেছে।
ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব কমিশন সভার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার।
ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন: ইসির সংলাপে ২৬টি দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে ও তিনটি দল বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর সব নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছে। তবে তা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে।
ভোটে সেনা মোতায়েন হলেও তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে তা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে আইন শৃংখলাবাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনী বাদ দেওয়ার পর তাদের কার্যপরিধি কেমন হবে তা নির্ধারিত হওয়া উচিত।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এ নির্বাচনটি একটি দল বর্জনও করেছে। তবে বর্তমান বিরোধী দল সরকারের পাশাপাপাশি মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়েছে। এ অবস্থায় কীভাবে একটি দল সরকারে ও বিরোধী দলে থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কঠিন সমস্যারও সমাধান হতে পারে।
নির্বাচনে নিরপেক্ষতা: ভোটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি নির্বাচনের পূর্বশর্ত। …রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ক্ষমতাসীন দল যে সুবিধা ভোগ করে বিরোধী দল তা ভোগ করতে পারে না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের কমিটি ধরে ধরে মামলা দায়ের ও গায়েবি মামলা দায়েরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ অবস্থায় তফসিল ঘোষণার আগে ইসি সম আচরণ নিশ্চিতে বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি: নির্বাচনকালে সার্বিকভাবে জনপ্রশসান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করতে বলেছেন অনেকে। এ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ইসির কাছে অর্পিত হলে জন আস্থা বেড়ে যাবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তা সহায়ক হবে।
সরকারের সঙ্গে সংলাপ: এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য মনে হলে তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের সঙ্গে তা নিয়ে ইসির সংলাপ করা উচিত।
এর আগে গত ৩০ অগাস্ট কমিশনের যে সভায় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেখান থেকেও মাহবুব তালকুদার আপত্তি জানিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি মনে করি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কারণ, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না।”