দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাগারে থাকা বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াকে দ্রুত ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং তার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 04 Oct 2018, 04:47 PM
বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ বোর্ড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
খালেদার চিকিৎসায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার যে মেডিকেল গঠন করে দিয়েছিল, তার তিন সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন তিনজনকে সেখানে দায়িত্ব দিতে বলেছে আদালত।
হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিকাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে থাকবেন।
আর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর বদলে নতুন তিনজনকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করে দেবে সরকার।
তবে এই তিনজনের কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকারসমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচীপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা প্রাক্তন সদস্য কিংবা সমর্থক হতে পারবেন না।
হাই কোর্ট বলেছে, এই বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া তার পছন্দমত ফিজিওথেরাপিস্ট, গাইনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিতে পারবেন। বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারবেন।
খালেদা জিয়াকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি এবং ভর্তি করা মাত্র তার চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহমান ও মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড ঘোষণার পর থেকে খালেদা কারাগারে বন্দি। তাকে ইউনাইটেড বা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি ‘রাজনীতি’ করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে ৭৩ বছর বয়সী খালেদার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পর সরকার ওই মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দেয়।
ওই বোর্ডের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নতুন করে ‘গুরুতর কিছু’ পায়নি বলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন সে সময় সাংবাদিকদের জানান।
ওই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি নেতারা সে সময় অভিযোগ তোলেন, সরকারের ‘পছন্দ অনুযায়ী’ প্রতিবেদন তৈরির পরিকল্পনা থেকে ‘অনুগত ও পছন্দের লোকদের’ দিয়ে ওই মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে।
এদিকে ৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দিনই খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি এবং তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিশেষ বোর্ড গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
কিন্তু ওই আবেদনের ওপর শুনানি খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে পাঁচবার এবং রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে দুইবার পিছিয়ে যায়। পরে মঙ্গল ও বুধবার শুনানি করে আদালত বৃহস্পতিবার আদেশ দেয়।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আদেশের বিরোধিতা করিনি। আমরা বলেছি, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তার ইচ্ছামত যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন না। তাকে চিকিৎসা সরকারই দেবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে রেখে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে এবং তার নিরাপত্তার স্বার্থেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”
মাহবুবে আলম বলেন, “আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে বলেছেন, যেহেতু তিনি একজন আসামি এবং সরকারের হেফাজতে আছেন, সরকারের হেফাজতেই তাকে থাকতে হবে। সরকারের পছন্দমত যে হাসপাতালে উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে, সেখানেই চিকিৎসা করাতে হবে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আদালত সংক্ষিপ্ত আদেশ দেবে বলেছে। পিটিশনারের খরচে সে আদেশ বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে পৌঁছানো হবে। যখনই তারা পাবেন আমি আশা করব তখনই তারা পদক্ষেপ নেবেন।”
এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করবে কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “আমার মনে হয় না। তবে রায়টা দেখে যদি মনি করি যাওয়ার কারণ আছে, সেক্ষেত্রে যাব। কোর্টে থেকে যা শুনেছি তাতে আমার মনে হয় না যে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।”
খালেদার আইনজীবী কায়সার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে এই আদেশের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হল, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার যে সাংবিধানিক এবং আইনগত অধিকার ছিল, তা ভুলণ্ঠিত করেছিল।”
তিনি বলেন, “আদালত পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছে, আবেদনকারী (খালেদা জিয়াকে) দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তার সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে যথাযথ মানসম্মত চিকিৎসা দিতে হবে।”