১২ বছর বয়সী ওই কিশোর বলছে, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল, বুদ্ধির জোরে সে মুক্ত হতে পেরেছে। তবে পুলিশের ধারণা অন্যরকম।
Published : 06 May 2024, 03:23 PM
চট্টগ্রামে এক স্কুলছাত্র ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১৩ ঘণ্টা পর তার খোঁজ মিলেছে ১৩ কিলোমিটার দূরের এক জায়গায়; কিন্তু ঘটনার যে বিবরণ সে দিচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ।
সাজিদুল ইসলাম নামের ১২ বছর বয়সী ওই কিশোর বলছে, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল, বুদ্ধির জোরে সে মুক্ত হতে পেরেছে। তবে পুলিশের ধারণা, সে নিজেই কোথাও ‘অ্যাডভেঞ্চারে’ গিয়েছিল; ফিরে এসে ‘গল্প’ বলছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজিদদের বাসা রাউজানের পাহাড়তলী এলাকায়। রোববার সে স্কুল থেকে না ফেরায় উদ্বিগ্ন স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। শুরু হয় থানা পুলিশ।
পরে গভীর রাতে রাউজানের মুন্সীরঘাটা এলাকার এক দোকানির ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কোথায় ছিল, কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে, সেসব বিষয়ে ওই কিশোরের ভাষ্য শুনে রীতিমত হতভম্ব হয়ে যান তারা।
সাজিদের মামা চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাজিদকে অপহরণ করা হয়েছিল। নিজের বুদ্ধিমত্তায় সে অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, সাজিদ দুপুরে বাড়ি ফিরে না আসায় তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তা তারা পাননি।
সাজিদের ভাষ্য, রোববার দুপুরে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে অপরিচিত এক নারী তাকে একটি কাগজ দিয়ে ঠিকানাটা কোথায় জানতে চায়। কাগজটি খুলে ছোট ছোট লেখা পড়তে গেলে সে ‘অজ্ঞান’ হয়ে যায়।
তার দাবি, জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে একটি বেড়ার ঘরে দেখতে পায়। যেখানে তিন যুবককে দেখলেও ওই নারীকে দেখেনি। এ সময় এক যুবক তার কাছে তার মায়ের মোবাইল নম্বর চায়। কিন্তু সে তা দেয়নি। সেজন্য তাকে মারধরও করা হয়।
রাত ২টার দিকে অটোরিকশায় করে তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার সময় সে মুন্সীরঘাটা এলাকায় লাফিয়ে নেমে যায়। পরে এক দোকানে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে ফোন করে মায়ের নম্বরে। তাতেই পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ পায়।
রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। তার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে কিশোর বয়সের অ্যাডভেঞ্চারের জন্য সে নিজে নিজে এমন করতে পারে।
“সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে স্কুলে যাবার কথা বলে বের হলেও সে স্কুলে উপস্থিত ছিল না। তার বক্তব্যও অসংলগ্ন। তবু আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি। সে যে যে এলাকার কথা বলছে, সেসব এলাকায় সিসিটিভি ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদি সত্যিকারে অপহরণ হয়ে থাকে, তাহলে অপরাধীরা যাতে পার পেয়ে না যায়, সেটা আমরা দেখব।”
ওসি বলেন, “সাজিদ বাড়ি ফেরার পর তাকে থানায় এনে আমি নিজে কথা বলেছি। তার কিছু কথা আমার কাছে অসংলগ্ন মনে হচ্ছে। সে বলেছে অটোরিকশা থেকে লাফিয়ে নেমে গেছে। অটোরিকশায় আর কেউ ছিল কিনা সেটা জানতে চাওয়া হলে সাজিদ বলেছে, অটোরিকশার পেছনে তাকে একা বসানো হয়েছিল, আর দুই যুবক বসেছিল চালকের পাশে। বিষয়টা নিয়ে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে।”
ওসি বলেন, “শিশুটির কথায় আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, সে নিজে কোনো গল্প তৈরি করেছে। তবুও আমরা সবদিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছি।”
সাজিদের মামা অসহযোগিতার যে অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, “ছেলেটির পরিবারের সদস্যরা বিকাল ৪টার দিকে থানায় জিডি করতে এসেছিলেন। স্কুল ছুটির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হওয়ায় আমরা তাদের বলেছি আরেকটু ভালো করে খোঁজ নেওয়ার জন্য। সে কিন্তু নিজেই বাড়ি ফিরে এসেছে।”