ভোটের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচার ঠেকাতে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কড়াকড়ি আরোপের একটি প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে নির্বাচন কমিশনে।
Published : 02 Mar 2018, 10:28 PM
ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমন প্রস্তাব পেলেও তা এখনও কমিশনে উপস্থাপন করা হয়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফেইসবুকের মত মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার নিয়ন্ত্রণ করা হবে চ্যালেঞ্জের বিষয়। যেখানে নির্ধারিত ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কিনা তার তদারকি করাই কঠিন হচ্ছে; সেখানে নতুন এ উদ্যোগ নিলে ইসিকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।
অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা দলের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচার বা অপপ্রচার ঠেকাতে যে ‘মনিটরিং’ দরকার, সে কথাও তারা বলছেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর মত কাজে সরকার যেখানে সাফল্য পাচ্ছে না, সেখানে ভোটের সময় অপপ্রচার ঠেকাতে ইসির সক্ষমতাও বিবেচনা করতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাঁচ বছর আগে দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও এরকম একটি আলোচনা হয়েছিল। তবে সে সময় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের ইসি আর এগোয়নি।
আইন অনুযায়ী ভোটের সময় শুরু হয় তফসিল ঘোষণার পর থেকে। প্রার্থী ও দল প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচারণা শুরু করতে পারেন। ভোটের আগে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তা দেখতে নির্বাহী হাকিম ও ইসি কর্মকর্তারা মাঠে থাকেন। আর নির্বাচনী ব্যয়ের বিবরণী ইসিতে জমা দিতে হয় প্রার্থীদের।
২০১৩ সালে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে ‘ধর্মের অপব্যবহার’ ও ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে না পারায় জাতীয় সংসদে ইসির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এবার ইসির আইন ও বিধিসংস্কার সংক্রান্ত কমিটি এ বিষয়ে নতুন একটি প্রস্তাব যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে বলে কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান।
ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে- প্রতীক বরাদ্দের আগে ফেইসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে না। মোবাইলে এসএমএস, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ অন্য প্রার্থীর সম্মানহানীকর কোনো প্রচার চালাতে পারবেন না।
তবে প্রার্থীরা স্থানীয় কেবল টিভির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার চালালে তাতে আপত্তি জানানো হয়নি ওই প্রস্তাবে। আচরণবিধি অনুসরণ করে সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার চালানোর সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাতে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব চিন্তাভাবনা রয়েছে। কোনো ধরনের প্রস্তাব এখনও কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। সেক্ষেত্রে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার বন্ধ করার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে- এমন কথা বলার সময় এখনও আসেনি।”
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির অধীনে রংপুর ও কুমিল্লায় সিটি নির্বাচন হয়েছে। দলীয় প্রতীকে সেসব নির্বাচনেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। তবে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে সে সময় অপপ্রচারের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো চেষ্টা ছিল না নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে।
এবার সোশাল মিডিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘চিন্তাভাবনার’ মধ্যেই এর সমালোচনায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আবারও একটি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে সরকারি প্রেসকিপশনে এগোচ্ছে ইসি। আচরণ বিধিমালা সংশোধনের নামে একটি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে এই কালো আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
রিজভীর ভাষায়, এর লক্ষ্য হল ‘সরকারি কারসাজি আড়াল করতে অবাধ তথ্য প্রবাহের হাত-পা কেটে ফেলা’।
“উন্নত দেশগুলোও তা সঠিকভাবে তদারকি করতে পারে না। বাংলাদেশে প্রচার বন্ধের উদ্যোগ নিলেও নানা ধরনের প্রশ্ন উঠতে পারে।”
আব্দুল আলীম বলেন, দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা উসকানিকমূলক কিছু করা হলে বিদ্যমান আইনেই ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমান বিধিতে বলা হয়েছে – উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না। ব্যক্তিগত চরিত্রহনন করে বক্তব্য দেওয়া বা লিঙ্গ, সম্প্রদায় বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া চলবে না।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী বা তার পক্ষে দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দলকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিলের মত ক্ষমতাও রয়েছে ইসির হাতে।
এ অবস্থায় সোশাল মিডিয়ায় প্রচার বন্ধের বদলে অপপ্রচার বা বিদ্বেষমূলক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে তা বন্ধের পরামর্শ দেন ইডব্লিউজি পরিচালক।
“ব্যয় মনিটরিং করার একটা সিস্টেম রয়েছে। সেটা কার্যকর করতে হবে। অনলাইনে প্রচার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তার জন্যে একটা শক্তিশালী টিম লাগবে। কী পদ্ধতিতে, কখন কীভাবে মনিটরিং করা হবে- সেজন্য দক্ষ লোকবলও লাগবে।”
সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগ, বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে তারপর এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যায় বলে মত দেন আব্দুল আলীম।
আরো পড়ুন