“আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে, সঠিক থাকবে ইনশাল্লাহ”, ভোট বর্জন প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
Published : 04 May 2024, 04:00 PM
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ‘সরকারের পাতানো ফাঁদ’ বলে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে ভোট বর্জন করে সংসদের বাইরে চলে যাওয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিবের মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচিতে মির্জা আব্বাস কথা বলেন ভোট বর্জনে তার দলের অবস্থান নিয়ে।
জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারে উপজেলা নির্বাচন থেকেও দূরে থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আরেকটা ফাঁদ। এর আগে জাতীয় নির্বাচনেও ফাঁদ পেতেছিল… বিএনপিকে নির্বাচনে নেবে কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে।”
নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না দাবি করে তিনি বলেন, “যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না, সেই নির্বাচনের প্রয়োজন বাংলাদেশে নাই। রাজতন্ত্র কায়েম করতে পারেন, রাজতন্ত্র ঘোষণা দিতে পারেন, কিন্তু নির্বাচনের কথা আপনাদের মুখ দিয়ে মানায় না।”
৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যায়নি দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “লোকজন এবারও যাবে না।”
এবার চার ধাপে হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে দেড়শটি উপজেলায় ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপি বর্জন করলেও অন্তত ২৮টি উপজেলায় দলটির নেতারা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী চেয়ারম্যান মিলিয়ে ভোটে লড়ছেন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত অন্তত ৭৯ জন।
বিএনপি তিন দফায় ৮০ জনকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ৭৯ জনই ভোটের লড়াইয়ে আছেন। বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলের সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ। একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কেবল ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
পরের ধাপে যে ১৬১টি উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে, সেখানেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দলের কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন বিএনপির অন্তত ৬৩ জন নেতা।
মানববন্ধনে উপস্থিত বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, “জামালপুরের সরিষাবাড়ী, কক্সবাজার ও বরিশালে ওরা “আওয়ামী লীগ) নাকি বলেছে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না।”
তাকে উদ্দেশ করে আব্বাস বলেন, “এটা শুধু দেখার জন্য আনন্দের বিষয়। ‘কুকুরের কুকুরে’ কামড়াকামড়ি করছে। আমরা শুধু দেখি। আমাদের শুধু দেখার বিষয়। আমরা তো নির্বাচনে নাই।
“ওরা ওদের প্রার্থীকে নির্বাচনে দাঁড়াতে দেবে না, বিএনপির প্রার্থী দাঁড়ালে কী দাঁড়াত অবস্থাটা? তো আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে, সঠিক থাকবে ইনশাল্লাহ।”
‘সরকারের পতন হবেই’
সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান আব্বাস। তিনি বলেন, “আরে ভাই আমি তো সরকারই দেখি না। এটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। সুতরাং এই সরকারকে উখাত করার দায়দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না।
“জনগণ যখন মনে করবে তখন লাথি দিয়ে সরকারকে ফেলে দেবে, সরকার থাকতে পারবে না।”
গ্রেপ্তার করে পৃথিবীর আন্দোলন কোনো কেউ থামাতে পারেনি দাবি করে তিনি বলেন, “একদিন এই ‘স্বৈরশাসকের’ পতন ঘটবেই জনরোষের মুখে, এটাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
“আমাদের নেতা তারেক রহমান একদিন এই দেশে ফেরত আসবেন। তিনি এই দেশে ফিরে এসে নেতৃত্ব দেবেন।”
খালেদা জিয়া দেশের সর্বনাশ করে গেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে আব্বাস বলেন, “উনি নাকি ঠিকঠাক করছেন। ভাই কী ঠিক করছেন আমার জানা নাই।”
দেশের মানুষের পেটে ভাত নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যারা তিন বেলা খেতেন তারা দুই বেলা খায়, যারা দুই বেলা খেতেন তারা এক বেলা খায়, যারা এক বেলা খেতেন তারা আধা বেলা খায়। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।
“তিনি দেশের উন্নয়ন করেছেন। এই উন্নয়ন চুরির উন্নয়ন। এটা দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না।”
আয়োজক সংগঠন হাবিবুর রশিদ হাবিব মুক্তি পরিষদের আহ্বায়ক এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাও বক্তব্য রাখেন।
আরো পড়ুন:
ভোটে থাকছেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা, দুষছেন দলকেই
উপজেলায় ভোটে এসে বিএনপির পদ হারালেন ৭৩ নেতা