“যারা নির্বাচনের আনন্দে মেতে যায়, নিশ্চয় তারা দলের আদর্শ-নীতি তারা মানে না”, বলেন রিজভী।
Published : 03 May 2024, 07:44 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত জনগণের প্রতি স্থানীয় সরকারে উপজেলা নির্বাচন বর্জনেও ডাক এসেছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
প্রথম ধাপে ভোটের প্রচার চলার মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান এল।
শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, “‘তথাকথিত’ উপজেলা নির্বাচন বর্জন করুন। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। জনগণকেও বর্জন করতে উৎসাহিত করুন। গণতন্ত্রের পক্ষ নিন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন।”
নির্বাচনে যাওয়াকে ‘তরকারির একটু ঝোল’ নেওয়ার সঙ্গে তুলনা করে বিএনপি নেতা বলেন, “ওটাই কি বড় ব্যাপার হল? নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ বলে কিছু নাই?
“যেখানে (ভোট বর্জনের) সিদ্ধান্ত রয়েছে, যেখানে এত নেতাকর্মী কারাগারে, তারা নিপীড়ন-নির্যাতনে প্রতিদিন মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাচ্ছে, তখন যারা নির্বাচনের আনন্দে মেতে যায়, নিশ্চয় তারা দলের আদর্শ-নীতি তারা মানে না।”
আওয়ামী লীগের অধীনে যারা নির্বাচনে করতে চায়, তারা ‘মূর্খের স্বর্গে’ বাস করে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “এক ধরনের ঘোরের মধ্যে থাকে তারা। নির্বাচনে কী পরিণতি হবে, এটা তো ১৬/১৭ বছরে দেখিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা ও তার লোকেরা।
“আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেছেন, জমা দিতে পারেনি, রাস্তার মধ্যে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। রিকশার প্রচার চালাতে গেছে, সেই রিকশা ভেঙে ফেলা হয়েছে, মাইক ভেঙে ফেলা হয়েছে, এটা তো একটার পর একটা দৃষ্টান্ত।”
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের মত এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটও বর্জন করেছে বিএনপি। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটে প্রার্থী ছিল বেশি। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জিতে এসেছেন, একজন ভাইস চেয়ারম্যান সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ নিয়ে নৌকা প্রতীকে জিতে এসেছেন।
আরও বেশ কয়েকজন অন্য দলে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছেন।
জাতীয় নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনেও যাচ্ছে না বিএনপি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এই সিদ্ধান্তে অটল তারা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অন্তত দেড় বছর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি।
তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরও আছে ভিন্ন কৌশল। তারা ভোট জমিয়ে তুলতে দলীয় প্রতীক তুলে দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু উপজেলায় বিএনপি নেতাদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দেখা যাচ্ছে।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে যে দেড়শ উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে অন্তত ২৮টিতে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা।
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে ভোটে আছেন সব মিলিয়ে অন্তত ৭৯ জন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দলীয় সব পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের বিষয়ে রিজভী বলেন, “দুই-একজন বিপথগামী লোক থাকেই। সেই বিপথগামী লোক নির্বাচন করতেই পারে এবং দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
“৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচনে’ আমাদের দুই-একজন লোক তো গেছে, তাদেরকে জেতানোও হয়েছে। তাকে কী হয়েছে? ‘৯৫ শতাংশ’ ভোটাররা ভোট দিতে যায়নি।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ‘জয় হয়েছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “জনগণ অ্যাকসেপ্ট করবে, সেটাই তো বিজয়ের ব্যাপার।”
দ্বিতীয় ধাপে যে ১৬১টি উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে, সেখানেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন অন্তত ৬৩ জন নেতা। তাদেরকেও কারণ দর্শাতে বলেছে নেতারা।
দলীয় নেতাদেরকে রিজভী বলেন, “আওয়ামী ‘অপশক্তি’ আপনাকে কিংবা আপনাদেরকে ভয় কিংবা প্রলোভন দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইলেও দয়া করে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। ‘তথাকথিত’ উপজেলা নির্বাচন কিংবা ‘কথিত’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এই মুহূর্তে জরুরি বিষয় নয়। ‘স্বৈরাচারী’ শেখ হাসিনার শাসনামলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দীর্ঘায়িত প্রক্রিয়ায় অংশীদার হওয়ার চেয়ে আপনাদের জন্য জনগণের ভালোবাসায় ধন্য হওয়া অনেক বেশি গৌরবের, অনেক বেশি সম্মানের।”
ভোটে যাওয়া নেতাদের বহিষ্কারের পর অনেকে ভোট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে দাবি করে রিজভী বলেন, “এই মুহূর্তে যারা যাচ্ছে তারা দলের লোক নয়, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছে, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নিজেদের দেলের নেতা-কর্মী, এত নিষ্ঠুর হব কেন?”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল কুদ্দুস, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: