ভোটের আগে শেষ পর্যায়ে বরাবরের মতো প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল।
Published : 26 Nov 2023, 07:08 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ নিয়ে দলীয় কার্যালয় ঘিরে লোকসমাগম-উচ্ছ্বাসে কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন দেখছেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তবে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তার পক্ষে প্রচারণায় কড়াকড়িভাবে আচরণবিধি প্রয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি। সেক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন সিইসি।
রোববার নির্বাচন ভবনে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। গত ১৫ নভেম্বর সিইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, ১-৪ ডিসেম্বর বাছাই ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর।
চরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার সময় কোনো মিছিল শোডাউন করা যাবে না। চলাচল বিঘ্ন করে সড়কে জনসভা ও পথসভা করা যাবে না। সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রার্থী হলে সরকারি সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বেশ কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে।
বিধি না মানলে প্রার্থী/সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
সারাদেশে ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমায় ৬৬জন রিটার্নিং অফিসার ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে ২৮ নভেম্বর থেকে মাঠে নামছে ৮০২ নির্বাহী হাকিম ও ৩০০ জন বিচারিক হাকিম।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা এবং সভাকে কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ২০০৮ সালের যে আচরণবিধি রয়েছে, এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রার্থী। মনোনীত প্রার্থী, সম্ভাব্য প্রার্থী এরা কেউ প্রার্থী নয়। মনোনয়নপত্র দাখিল করার পরে যিনি চূড়ান্ত হবেন তিনিই প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সিইসি জানান, মনোনয়নপত্র জমার পর রিটার্নিং অফিসার যাচাই-বাছাই করবেন। এ নিয়ে আপিল হতে পারে; এরপর নিষ্পত্তি হবে। তারপর রিটার্নিং অফিসার যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা করবেন। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক দেবেন রিটার্নিং অফিসার।
“১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। এর আগে যেসব প্রচারণা হচ্ছে তা আমাদের কাছে প্রচারণা নয়। এখন যদি কোনো দল প্রতীক নিয়ে প্রচারণা করেন, তাতে কোনো বাধা নেই। আমরা নিয়ন্ত্রণ করব চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। যখন রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করবেন, তখন তাদেরকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। দেখব, তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কিনা, করলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
তখন আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে ইসি ও রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা নিতে পারবেন, বলেন তিনি।
দলীয় অফিসে উচ্ছ্বাসে বাধা নেই, তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে নয়
এক প্রশ্নে সিইসি বলেন, “ইসির কোনো আইনে বলা নেই- দলীয় ফরম কেনার সময় শোডাউন করতে পারবেন না, গাড়ি ঘোড়া যেতে পারবে না, দলবদ্ধভাবে যেতে পারবেন না বা আনন্দ উল্লাস করতে পারবেন না। এটা বলা নেই। এখনও নির্বাচনী আচরণবিধিমালা প্রযোজ্য হয়নি। মূল কথা হচ্ছে (প্রচারণার সময় শুরু হলে) কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না।
“শোডাউনের কথা আমাদের আইনে বলা রয়েছে, সেটি হল যখন মনোনয়পত্র দাখিল করতে যাবে। আইনের পরিধির মধ্যে থাকতে চাই, সীমিত থাকতে চাই। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমার সময় কিভাবে যেতে হবে তা স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে। এটা লঙ্ঘন করা যাবে না।”
নির্বাচন-পূর্ব সময় নিয়ে সিইসির ব্যাখ্যা
আচরণবিধিমালায় ‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের’ সময় বলতে তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফল গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে বোঝানো হয়।
তফসিল হলেও প্রচারণা শুরুর আগে আচরণবিধি প্রযোজ্য হবে কিনা- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “নির্বাচনপূর্ব সময়ের কতগুলো স্টেজ আছে, ধাপ আছে। তফসিলে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় থাকে, এরপর বাছাইয়ের সময়, আপিল, তারপর প্রত্যাহার।
“এগুলো হচ্ছে নির্বাচনপূর্ব সময়ের বিভিন্ন কাজের বিভিন্ন স্টেজ। প্রত্যাহারের সময়ের পর রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করবেন। প্রতীক বরাদ্দ দেবেন। এরপর প্রচারণা শুরু হবে, যা চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ভোটের দিন। ফলাফল হবে, একীভূত ফলাফল রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা করবেন।”
আচরণবিধি এখন প্রযোজ্য না হলে ইতোমধ্যে রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে কিভাবে ‘সতর্ক’ করা হল জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান সিইসি।
গত ১৭ নভেম্বর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময়ের কথা বলে জনসমাবেশ করায় এ সংসদ সদস্যকে সতর্ক করে ইসি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রদবদল, এখতিয়ারের বাইরে নয়
নির্বাচনকে ঘিরে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ মতো প্রশাসনে রদবদল করার বিষয়ে একমত নন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে ভোটের সময় প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে, এবার করবেন কিনা, জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউায়াল বলেন, “প্রশাসনে রদবদল কোন নির্বাচন কমিশন করেছিল, আমাদের একটু বলবেন? সেটা নির্বাচন কমিশন করেনি, সরকার করেছে। যেটা লতিফুর রহমান সাহেব করেছেন। তিনি কখনও সিইসি ছিলেন কিনা আমি জানি না। তিনি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা, সেটা সরকার।”
সরকার ও ইসির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এখতিয়ারের মধ্যে যা করার কমিশন করবে।
“আমরা যেটা প্রয়োজন মনে করব সাথে সাথে দেখব। আমরা নির্বাচনের স্বার্থে যেটা ভালো মনে করব, যেটা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে; সেভাবেই করব। এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে তা অতিক্রম করে আমরা কিছু করতে যাব না।”
সেনাবাহিনী নিয়ে সংশয়ের কারণ নেই
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রয়োজনের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সিইসি।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “নির্বাচনে সব সময় দেখেছি সেনাবাহিনী আছে। সেনাবাহিনী নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সেনাবাহিনী নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। প্রয়োজন হলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। যদি প্রয়োজন মনে করি, আমরা চাইলে সেনাবাহিনী দেবে। এতে সংশয় বোধ করার কোনো কারণ নেই।”
আরও পড়ুন:
সংসদ নির্বাচন: যা করতে মানা মেয়র-চেয়ারম্যানদের
নিজ খরচে ভোটের আগাম প্রচার সামগ্রী সরাতে বলেছে ইসি
আচরণবিধিতে কঠোর হবে ইসি, এক সংসদ সদস্যকে সতর্কতা