নিজ খরচে ভোটের আগাম প্রচার সামগ্রী সরাতে বলেছে ইসি

স্থানীয় সরকার বিভাগকে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, 'সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী ও নির্বাচনি ক্যাম্প থাকলে সেগুলো অপসারণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।'

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2023, 07:13 AM
Updated : 18 Nov 2023, 07:13 AM

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, তোরণের মত যাবতীয় আগাম প্রচার সামগ্রী সরিয়ে নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।

আর এসব প্রচার সামগ্রী সরানোর খরচ সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকেই বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

গত বুধবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরদিন স্থানীয় সরকার বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে ইসি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় হচ্ছে ৩০ নভেম্বর। এরপর ১-৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বাছাই আর ১৭ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের সময় শেষে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হবে। তার তিন সপ্তাহ পর ৭ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ। 

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে এবং প্রচারের জন্য ১৯ দিন সময় রয়েছে।  ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ,১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে। 

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা এ সংক্রান্ত ইসির নির্দেশনা বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী ও নির্বাচনী ক্যাম্প থাকলে সেগুলো অপসারণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা সামগ্রী থাকলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণকে নিজ খরচে অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি।

“সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে হবে। এজন্য নির্ধারিত সময়ে প্রচারণা সামগ্রী অপসারণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করা হলো।”

ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় শহর, গ্রামেগঞ্জে নানা ধরনের পোস্টার, লিফলেটসহ প্রচারপত্র করেছেন। সংশ্লিষ্টরা প্রার্থী হলেই তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে পারে।

আচরণবিধি না মানলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও বিধান রয়েছে।

ভোটের প্রচারে কী কী করার সুযোগ আছে, আর কী করা যাবে না- বলা রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিতে।

# তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্প অনুমোদন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অথবা উদ্বোধন এবং অনুদান বা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।

 # দেয়ালে লিখে কোনো ধরনের প্রচার চালানো যাবে না। কোনো যানবাহন, দালান, সেতু, সড়ক দ্বীপ ও ডিভাইডারেও ভোটের প্রচার নিষিদ্ধ।

 # নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতীক হিসাবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।

 # নির্বাচনী প্রচারে কোনো গেইট বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না কোনোভাবেই।

 # প্রার্থী কিংবা সমর্থকরা ভোটের সমাবেশের জন্য ৪০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের প্যান্ডেল তৈরি করতে পারবেন না।

 # প্রচারের সময় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে প্রতি ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ একটি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে।

 # প্রচারের সময় বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ। ভোটারদের কোনো ধরনের খাবার বা উপঢৌকন দেওয়া যাবে না।

 # মাইকে ভোটের প্রচার চালানো যাবে কেবল দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

# মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না।

 # প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার ঝুলিয়ে রাখতে হবে দড়িতে। পোস্টারে কেবল নির্বাচনী প্রতীক, প্রার্থীর ছবি এবং দলীয় প্রধানের ছবি ছাপানো যাবে। পোস্টার হবে নির্দিষ্ট মাপের এবং সাদা কালো, রঙিন পোস্টার নিষিদ্ধ।

 # প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, হুইপ, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও তাদের সমান পদমর্যাদার কেউ, সংসদ সদস্য এবং মেয়ররা ভোটের প্রচারে প্রোটকল পাবেন না। কোনো উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনও তারা করতে পারবেন না, যা প্রচার বলে গণ্য হতে পারে।

 # এক্ষেত্রে সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি মেশানো যাবে না। প্রচারে সরকারি যানবাহন ও অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না। প্রচারে সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যবহার করা যাবে না।

 # প্রার্থী বা এজেন্ট না হলে ভোট দেওয়া ছাড়া ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকব এবং ভোট দেওয়া ছাড়া নির্বাচনের আগে এলাকায় সফর ও প্রচারণাও নিষিদ্ধ।

 # প্রচারের সময় উসকানিমূলক, মানহানিকর, ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয় এমন বক্তব্য দিলেও তা হবে আচরণবিধির লঙ্ঘন।

আরও পড়ুন-

Also Read: নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসুন, ভোট কারচুপি প্রতিহত করুন: সিইসি

Also Read: ৭ জানুয়ারি ভোট, তফসিল ঘোষণা করেছেন সিইসি

Also Read: তফসিল ঘোষণা, ভোট ৭ জানুয়ারি

Also Read: প্রতীক বরাদ্দের পর ব্যালট ছাপা, জেলায় যাবে ৩-৪ দিন আগে

Also Read: এবারও ভোটারপ্রতি খরচ করা যাবে গড়ে ১০ টাকা

Also Read: তফসিল ঘোষণা, ভোট ৭ জানুয়ারি

Also Read: চট্টগ্রামে পোস্টার-ব্যানার সরাতে মাঠে নেমেছে ইসি