ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়েছে।
Published : 02 Dec 2024, 09:48 PM
দেড় দশক আগে রাজধানীর পিলখানায় তখনকার বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
সোমবার এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ রাষ্ট্রকে এই নির্দেশ দেয়।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত একটি আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ নভেম্বর একই বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিল।
“আজ এ বিষয়ে রাষ্ট্রের কাছে কোর্ট জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, একটি কমিটি হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। তখন জ্যেষ্ঠ বিচারক ভালো করে জেনে দুপুরে তা জানাতে বলেন। এরপর দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, এখনও কমিটি হয়নি, সময় প্রয়োজন। তখন কোর্ট এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কমিটি করার নির্দেশ দেন।”
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে কোর্ট ১০ দিনের রুল দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কমিটি ফরমেশনের জন্য। আজ আমরা বলেছি, দুই সপ্তাহের সময় প্রয়োজন। তখন কোর্ট ১৫ তারিখ পরবর্তী শুনানির আগে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।”
গত ২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদসহ দুই আইনজীবী রিট আবেদনটি করেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র সচিব; মন্ত্রিপরিষদ সচিব; আইন সচিব; পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়।
রিট মামলার আগে তারা এ ঘটনার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছিলেন। তাতে সাড়া না পেয়ে মামলাটি করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে।
গত ৪ নভেম্বর সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তর পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত হবে এবং অবশ্যই হতে হবে। দ্রুতই তদন্ত টিম করা হবে। যেহেতু অন্যান্য অনেকগুলো হচ্ছে, এটাও হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন...
পিলখানা হত্যার পুনঃতদন্তে কেন কমিশন নয়, হাই কোর্টের রুল
পিলখানা হত্যার পুনঃতদন্ত দ্রুতই: উপদেষ্টা
বিডিআর বিদ্রোহ: বিস্ফোরক আইনের মামলা পরিচালনায় ২০ বিশেষ পিপি
বিডিআর বিদ্রোহ: কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
বিডিআর বিদ্রোহ মামলা: ১৭ বিশেষ পিপির নিয়োগ বাতিল
'বিডিআর বিদ্রোহ' নিয়ে সেনা তদন্ত প্রকাশের দাবি বিএনপির হাফিজের