“অতি দ্রুত প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।”
Published : 17 Aug 2024, 07:05 PM
‘বিডিআর বিদ্রোহ’ নিয়ে সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে এ দাবি তোলেন তিনি।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘অন্তবর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল (শুক্রবার) শপথ নিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তার নেতৃত্বে একটা ‘ইনকোয়ারি’ হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে।
“তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে নাই। আমরা চাই, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে তকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকেও হত্যা করা হয়েছিলো।
বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে পরদিন। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করে।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে ট্র্যাজিক সেই ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম, যিনি তার আগে বিডিআর প্রধানেরও দায়িত্বে ছিলেন।
বিডিআরে মেধাবী, চৌকস সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে মেজর (অব.) হাফিজ অভিযোগ করেন, ‘‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখছি, এই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার হচ্ছে- দীর্ঘসূত্রিতা, ভেরি স্লো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না।”
“অতি দ্রুত প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।”
‘ভারত প্রসঙ্গে’
দীর্ঘদিন পর দলে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে মেজর (অব.) হাফিজকে। মাঠে নেমেই ভারতকে সতর্ক করলেন তিনি।
হাজিফ উদ্দিন বলেন, ‘‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে কিন্তু কোনো রকমভাবে আমাদের দেশ, সাধারণ মানুষ সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না। সার্কের প্রত্যেকটা দেশ আপনাদের বিরুদ্ধে কেন? ছোট ছোট দেশ, হোয়াট ইজ মালদ্বীপ, হোয়াট ইজ শ্রীলঙ্কা।
“আমরা ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা চাই, বন্ধুত্ব হবে জনগণের সাথে। সুতরাং বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।”
৫ অগাস্ট গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এখনও সেদেশেই আছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। বিএনপির দাবি, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হোক।
এ বিষয়ে মেজর (অব.) হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক, এহেন ঘটনা নাই করে নাই, কত মায়ের বুক যে খালি করেছে। আমরা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সভা থেকে দাবি করব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে।”
‘‘ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।”
‘নিকৃষ্টতম নির্বাচন কমিশন’
আলোচনার এক পর্যায়ে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন একটা নিকৃষ্টতম প্রতিষ্ঠান। ভোট ডাকাতি করে এত দিন আওয়ামী লীগকে বহাল রেখেছে তারা। এই কমিশন বলেছিল, আওয়ামী লীগ এলে ভোটাররা আসবে। ইলেশনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমান, এক ঘুমে ২৪% ভোট ৫৫% হয়ে গেছে দুপুরেই। ”
‘‘কি ধরনের ইলেশন কমিশন এরা, এখনও তারা কী করে থাকে?”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা কেউ নির্বাচিত নন বলে মন্তব্য করে তাদের সবাইকে দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি।
‘শেখ হাসিনার নামের সেনানিবাস বাতিলের দাবি’
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, “মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রেখেছে, সেজন্য আমি তাদের অভিবাদন জানাই। আমাদের যে দাবি, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নামে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে, অবিলম্বে তা বাতিল করতে হবে।”
বিগত কয়েকটি নির্বাচনের সাবেক সেনা প্রধানরা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ পক্ষে ‘তোষামোদি’ করেছেন বলে অভিযোগ তুলে তাদের সমালোচনা করেন তিনি।
‘তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা’
দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মেজর (অব.) হাফিজ।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। তাকে একটা কথা বলেছি, যেদিন নির্বাচন হবে, ইনশাআল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। কিন্তু আমরা যেন আওয়ামী লীগ না হই। আমরা জিয়াউর রহমানের বিএনপি থাকব।”
শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের ‘গণহত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে অভিযোগে এনে তার বিচার ও ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা দল এই সমাবেশ ও আলোচনা সভা করে।
সমাবেশে মুক্তযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘গণহত্যা’র সঙ্গে জড়িত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার, ভুয়া ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদকে জাতীয় বীর ঘোষণা, আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন ও অস্বচ্ছল পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর বক্তব্য দেন।