হাফিজ উদ্দিন বলেন, বিদেশি শক্তির অংশ হিসেবে বেশকিছু ব্যক্তি সুপরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জনগণের বিশ্বাস রয়েছে।
Published : 03 Sep 2024, 05:02 PM
ঢাকার পিলখানায় ১৫ বছর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত হলে ‘আসল রহস্য’ উন্মোচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
শিগগিরই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত শরু হবে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষণার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা হৃদয়বিদারক ঘটনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও সুদূরপ্রসারি কার্যক্রম রয়েছে এই দেশটাকে একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যে, যাদের কোনো শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে না।
“এই পুনঃতদন্তে সেই রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।…আমরা আশা করব, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নির্মোহভাবে নিরপেক্ষভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবেন এবং বিচারের কাজ দ্রুত শুরু করবেন।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার সচিবালয়ে সাংবাকিদের এক প্রশ্নে বলেন, “শুধু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই। সঠিকভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করা হবে।”
বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে দণ্ডিত করা হয়েছে, অনেক দোষী ব্যক্তি শাস্তির আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। তবু আমরা অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা বিএনপির অনুরোধে এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রহস্য উন্মোচনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যত পথপরিক্রমার জন্য অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি বলেন, “অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই নারকীয় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আমরা একটা সুষ্ঠু পরিণতি দেখতে চাই, বিচার চাই, যাতে করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের অন্তর শান্ত হয়।”
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “পিলখানা ঘটনার প্রধান কারণ কী ছিল? সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার জন্য, বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ অকার্য্কর, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছিল। এতে জড়িত বিদেশি শক্তির অংশ হিসেবে বেশ কিছু ব্যক্তি সুপরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জনগণের বিশ্বাস রয়েছে।
“এই হত্যাকান্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুনসহ আরো অনেক আওয়ামী লীগের নেতৃ্বৃন্দ এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্মীয়বর্গ জড়িত ছিলেন বলে জনগণেরর ধারণা রয়েছে।”
সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, “এই ঘটনায় সরকারের এবং বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, সবকিছু এখনো ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে। এই সম্পর্কে আমরা ২৮ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি পত্র হস্তান্তর করি। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নতুনভাবে তদন্ত করে পুনঃবিচার করতে হবে। এর সাথে কারা কারা সংশ্লিষ্ট, বিদেশি হস্তক্ষেপ আছে কি না, কী কারণে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, এ ব্যাপারে কমিশন গঠনের জন্য আমাদের দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
“সেনাবাহিনীর মেধাবী ৫৭ কর্মকর্তা ও বেসামরিক ১৭ জন লোককে হত্যা করা হয়। পিলখানার অভ্যন্তর থেকে ৩৮ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নির্মোহ ও উন্মুক্ত তদন্ত হলে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।”
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ‘আলোর মুখ’ দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে সরকারকে দেওয়া চিঠিতে একটি কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “যে পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার পাশাপাশি যদি সরকার মনে করে, একটা কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশনে অনেকের অনেক কিছু বলার থাকবে, যেটা আগে বলতে পারেনি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং এ কে এম শামসুল ইসলাম।