মঙ্গলবার সকাল ৮টায় দেশের ১৫৬ উপজেলায় ভোট শুরু হবে, একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
Published : 21 May 2024, 12:14 AM
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপের ভোট ‘আরও সুষ্ঠু হবে’ বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, প্রথমবারের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘ছোটখাটো’ সমস্যা তারা কাটিয়ে উঠবেন, ভোটার উপস্থিতি আরো বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
নির্বাচনের পরিবেশ ‘ভালো থাকবে’ আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং বাধাহীনভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা হবে।”
ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ও পুলিশ ‘অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে’ বলেও জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।
প্রার্থী ও অন্যান্য
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
অন্যদিকে বিএনপির অল্প কিছু নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়লেও, দলটি উপজেলা পরিষদের ভোট বর্জন করেছে।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ১৬১ উপজেলার। স্থগিত, ধাপ পরিবর্তন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় কিছু উপজেলা বাদ পড়েছে। শেষ পর্যন্ত ভোট হচ্ছে ১৫৬ উপজেলায়।
# এই ধাপে মোট ১ হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।
# তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
# এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৮ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, অর্থাৎ মোট ২২ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
# রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর– এই দুই উপজেলায় তিনটি পদেই একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এসব উপজেলায় ভোট করার প্রয়োজন পড়ছে না।
# স্থগিত, মামলা ও ধাপ পরিবর্তন হয়েছে বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও বানারীপাড়া (চতুর্থধাপে), রুমা (প্রশাসনিক কারণে স্থগিত), মৌলভীবাজার সদরে (মামলায় স্থগিত)।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুর্গম বিভিন্ন উপজেলার ৬৯৭ কেন্দ্রে সোমবারই ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হবে। আর বাকি ১২ হাজার ৩২৩ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে মঙ্গলবার ভোটের দিন সকাল ৮টার আগে।
নিরাপত্তা
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।
বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন সদস্য মোতায়েন থাকছেন।
ভোটের মাঠে ১৫৬ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত থাকছেন। উপজেলাভিত্তিক বিচারিক হাকিমরাও নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ভোটের আগে ও পরে চার দিনের জন্য আরও নির্বাহী ও বিচারকি হাকিম নিয়োজিত থাকবে।
দ্বিতীয় ধাপে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে ৪৫৮ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকছে। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ সদস্য থাকছেন ৪৭,৮২৯ জন এবং মোবাইল টিমে ১৩,৪৯০ জন ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে ৫,৫৬৭ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। আর সব মিলিয়ে ৮৯,৮৬৩ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন।
আইনশৃঙ্খল পরিস্থিতি রক্ষায় ২,৭৬৮ জন র্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ভোটকেন্দ্র, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে আনসার সদস্য থাকছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন।
অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা সদস্য মোতায়েন থাকবে ১৬ জেলায়; সেখানে অতিরিক্ত বিজিবি ২৫ প্লাটুন, অতিরিক্ত র্যাব ১৭টি, অতিরিক্ত কোস্টগার্ড ২ সেকশন ও অতিরিক্ত হাকিম ৩৮ জন দায়িত্বে থাকবেন।
মনিটরিং
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল থাকবে নির্বাচন কমিশনে। এই সেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়।
নির্বাচন উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করতে ও সুসংহতকরণের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সেলও গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন সুষ্ঠু করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব ঠেকাতে স্পিকারের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন ও পুলিশের প্রতি নির্দেশনাও দেওয়া হয়। প্রথম ধাপের ভোটে তেমন বড় ধরনের সংঘর্ষ ও সহিংস ঘটনা না ঘটায় স্বস্তি প্রকাশ করেনও তিনি।
প্রথম ধাপে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ঘটনায় কমিশনের তলবে ইসিতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জামিল হোসেন দুর্জয়ের প্রার্থিতা বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে হাই কোর্টের আদেশে প্রার্থিতা ফেরত পান ফেরত পান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসির বড় ভাই দুর্জয়।
ইভিএমে ভোট যেভাবে
এই ধাপে ১৫৬ উপজেলার মধ্যে ২৪টিতে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে।
ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যাওয়ার পর ভোটার নম্বরের ভিত্তিতে ভোটকক্ষ খুঁজে নিতে হবে ভোটারদের। লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত কক্ষে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে পৌঁছানোর পর যাচাই করা হবে ভোটারের পরিচয়।
কয়েকটি উপায়ে ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। এগুলোর মধ্যে আছে, স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে; দশ ডিজিটের স্মার্ট কার্ডের নম্বর; ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডির নম্বর; ১২ ডিজিটের ভোটার নম্বর এবং আঙুলের ছাপ শনাক্ত করে।
এর যে কোনো একটি পদ্ধতিতে তালিকায় ভোটারের নাম শনাক্ত করার পর মেলানো হবে তার আঙুলের ছাপ। ছাপ মিললে ভোটারের ছবি ও ভোট তথ্য সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনে একটি মনিটরে ভেসে উঠবে। প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ভোটার তা দেখতে পাবেন।
কন্ট্রোল ইউনিট থেকে আঙুলের ছাপ মিললে একজন পোলিং অফিসার ভোটার তালিকায় ভোটারের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখবেন। আরেকজন পোলিং অফিসার ভোটারের আঙুলে লাগিয়ে দেবেন ভোটের অমোচনীয় কালি। এরপর সেই ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
কোনো কারণে আঙুলের ছাপ না মিললেও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিধি মেনে মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশকে ভোটার হিসেবে শনাক্ত করে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাচনে তিনটি পদে পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে ডান দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করতে হবে এবং সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতাম চেপে ভোট সম্পন্ন করতে হবে।
ষষ্ঠ উপজেলা ভোটে দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন।
এরমধ্যে প্রথম ধাপে ২২ উপজেলায় ইভিএমে ভোট হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে ২৪ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
এবার চার ধাপে উপজেলা ভোট
দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার।
প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে গত ৮ মে। এসব উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩৬% ভোট পড়ে। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পার হচ্ছেন ২২ জন।
এরপর ২৯ মে তৃতীয় ধাপে এবং ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট রয়েছে।
পুরনো খবর
স্থানীয় নির্বাচনেও কেন ভোটের হারে ভাটা?
দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় ভোট ২১ মে
উপজেলা ভোট: দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২১ জন
এবার উপজেলার পরীক্ষায় আউয়াল কমিশন
উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৩৬.১%
মঙ্গলবার ভোটার বাড়বে, আশায় ইসি
ভোটার কম আসার ‘৫ কারণ’ দেখছেন ইসি আলমগীর
এক নজরে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: প্রথম ধাপ