স্থানীয় নির্বাচনে ক্রমে ভোটের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে গবেষকরাই ভালো বলতে পারবেন, বলেন তিনি।
Published : 10 May 2024, 12:07 AM
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটের হার কম হওয়ার পেছনে অন্তত পাঁচটি কারণ দেখছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকরা ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন করলে নিজস্ব পর্যবেক্ষণের আলোকে এসব কারণ তুলে ধরেন তিনি।
বুধবার ১৩৯ উপজেলা দিয়ে শুরু ষষ্ঠ উপজেলার ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য দেন এই নির্বাচন কমিশনার।
প্রথম ধাপে ২২টি উপজেলায় ইভিএমে ভোটের হার গড়ে ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাকিগুলোয় ভোটগ্রহণ হয়েছে ব্যালট পেপারে, যেখানে ভোটের হার গড়ে ৩৭ দশমিক ৩১ শতাংশ।
ইসি আলমগীরের ধারণা, বৈরী আবহাওয়া, একটি বড় দলের ভোটে না আসা, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, শহর এলাকায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি এবং হাওরে ধান কাটার ব্যস্ততার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, “হাওরাঞ্চলে ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটের হার কম হয়েছে।”
সিইসির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ইসি আলমগীরও বলেন, “বিশেষ করে হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে ধান কাটার কাজ চলছে। আকস্মিক বৃষ্টি হওয়ায় ওই সব এলাকায় ধান কাটা নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অধিকাংশ এলাকায় ভোটের দিন সকালে ঝড়-বৃষ্টি থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।”
স্থানীয় নির্বাচনে ক্রমান্বয়ে ভোটের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে গবেষকরাই ভালো বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তার মতে, প্রধান দুটি দলের একটি (বিএনপি) নির্বাচনে আসেনি। তাদের সমর্থকরা অংশগ্রহণ করেছে। রাজনৈতিকভাবে সমর্থন না পাওয়ায় তাদের লোকজন ভোট দিতে আসেনি। শহর এলাকায় ছুটি থাকলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। গাজীপুরে ভোট কম পড়েছে। শুধু ধান কাটা বা বৃষ্টি- এ দুই কারণে নয়, নানা কারণে ভোটের হার কম পড়েছে। এর বাইরে কোনো কারণ থাকলে তা গবেষকরা বলতে পারেন, কেন ভোট কমছে।
সবশেষ গত তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের যে হার ছিল, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে এসে দেখা গেল, এটিই সবচেয়ে কম ভোটের হার।
২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। অর্থাৎ ভোট পড়ার হার ক্রমান্বয়ে কমেছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে অন্যবারের চেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি হলেও কোনো ধরনের সহিংসতা না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “বুধবারের নির্বাচনে মানুষ হত্যা বা খুন হয়েছে অথবা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে-এমন কিছু হয়নি। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।”
জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, বলেন তিনি।
তিনি বলন, “ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে আমরা নির্বাচনগুলোয় দেখেছি ভোটের হার এমনই থাকে। কোনো কোনো এলাকায় বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের পৌর, ইউপি নির্বাচনে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। দেখা যায়, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, নানা কারণে ৭০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে, আবার ১৭ শতাংশ ভোটও পড়েছে।”
পরে আরও তিন ধাপে ভোট রয়েছে। আগামীতে ভোটের হার বাড়বে কি না, সেটা তখনকার আবহাওয়া পরিস্থিতি, প্রার্থীদের ভূমিকা, নির্বাচনি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, “আমরা ভোটের হার নিয়ে বলব না। আমরা চাই সামনের ধাপগুলো যেন আরও ভালো হয়। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সরকার পরিবর্তন হবে না এ নির্বাচনে। তবে সব দল এলে ভোট পড়ার হার আরও বেশি হত।
“কমিশনের আহ্বান থাকবে সবার যেন অংশগ্রহণ থাকে। কোন দল ভোটে আসছে বা আসছে না, সেটি রাজনৈতিক বিষয়। দেশের অনেক দল রয়েছে, সবার সক্ষমতা এক রকমও না। রাজনৈতিক দল যদি মনে করে ভোটে এলে জিততে পারবে না, সক্ষমতা তৈরি হয়নি; সেটা তাদের বিষয়। নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসা, ভোটের পরিবেশ ভালো রাখাটাই ইসির মূল কাজ।”