“অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের বিপরীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমাবেশে হামলা রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে বলে আমরা মনে করি,” বলা হয় বিবৃতিতে।
Published : 16 Jan 2025, 05:55 PM
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশের সমাজ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ২৭ নাগরিক।
হামলার ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বর্ণনা করে বৃহস্পতিবার তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় ‘পুলিশের নিস্ক্রিয়তা’ ও দ্বিতীয় দফা আক্রমণকালে পুলিশ হামলাকারীদের সরিয়ে নিলেও এ ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কোনো আইনি পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের বিপরীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমাবেশে হামলা রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে বলে আমরা মনে করি।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সোচ্চার কর্মীদের বেছে বেছে হামলা করা হয়েছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “এমনকি হামলাকারীদের ‘অপরাধ আড়াল করতে’, আক্রমণের ‘আলামত মুছে ফেলতে’ পুলিশকে রাস্তায় লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করতেও দেখা গেছে। এ ধরনের ঘটনা পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতার প্রমাণ সামনে চলে আসে। এ ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি ওই চিত্রকর্মটি বাতিলের দাবিতে এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়। নিজ নিজ কর্মসূচি পালনে উভয়পক্ষ বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ শুর হয়। এ ঘটনায় ৩৩ জন আহত হয়েছেন বলে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
হামলার ঘটনায় আরিফ ও আব্বাস নামের দুইজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
আদিবাসীদের ওপর হামলার ওই ঘটনায় ২৭ নাগরিকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা মনে করি, এ ধরনের অপরাধের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তা রাষ্ট্রীয় অসংবেদনশীলতা তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একইভাবে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি বাতিলের দাবি মেনে নেওয়া এবং এর প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা করে আদিবাসী ছাত্রজনতাকে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনা বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশের বিপরীতে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কায়েমের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
বিবৃতি দাতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাশেদা কে. চৌধূরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব নুর মোহাম্মদ তালুকদার, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, জোবায়দা নাসরিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও আদিবাসীদের ওপর হামলায় নিন্দা ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন-
হামলার প্রতিবাদ: প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা আদিবাসী