বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের ৩৩ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
Published : 15 Jan 2025, 09:33 PM
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়া নিয়ে এনসিটিবি কার্যালয় ঘেরাও নিয়ে সংঘাতের পর এবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হামলার প্রতিবাদ এবং ঘটনার জড়িতদের গ্রেপ্তারের বুধবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ এবং শুক্রবার হামলার ঘটনার বিচার ও আদিবাসী লেখা চিত্রকর্ম পুনর্বহালের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী গত ১২ জানুয়ারি ওই চিত্রকর্ম বাতিলের দাবিতে এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়।
নিজ নিজ কর্মসূচি পালনে উভয় পক্ষ বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার সংগঠক অলিক মৃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিছিল নিয়ে এনসিটিবিতে আসতেই স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর হামলা করেছে।
এ ঘটনায় ৭ জন গুরুতরসহ মোট ১৭ জন আদিবাসী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
অন্যদিকে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া দাবি করেছেন, হামলায় তাদের ১৬ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের আঘাত গুরুতর।
এদিকে আহত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের দেখতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
হাসপাতালে গিয়েছিলেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবীর, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএসমং, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুব ইউনিয়ন সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম।
প্রতিবাদ
আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতার মিছিলে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিভূতী ভূষণ মাহাতোর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আদিবাসীদের উপর হামলা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের উপর হামলা।
“আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার বদল হয়েছে, কিন্তু আদিবাসীদের উপর চলমান বৈষম্য ও নিপীড়ন, নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের সমতল ও পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী জনগণের উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন যে চলমান রয়েছে আজকের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলার মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে।”
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর ' হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি অবিলম্বে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং বাদ দেওয়া গ্রাাফিতি পুনরায় পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্ত করার আহ্বান জানান।