“দুর্বলতা বললে কম হয়ে যায়, যেসব কারণে আমাদের উদ্বেগ ছিল আগের আইনে, নতুন খসড়াতেও সেগুলো রয়ে গেছে,“ বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
Published : 30 Aug 2023, 06:53 PM
সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া যেভাবে রয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেটাই আইনে পরিণত হলে সেটি একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩: পর্যালোচনা ও সুপারিশ' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির মতামত তুলে ধরা হয়।
এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমি মনে করি, এটি নিবর্তনমূলক আইন। যেভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ‘কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া, সেটি প্রণীত হয়ে গেলে, এটাও কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হবে।
“এবং এটি বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। এক ধরনের বার্তা দেশবাসীর মধ্যে দেওয়া হচ্ছিল যে, মত প্রকাশ করলে, তথ্য প্রকাশ করলে নিজের বিবেক-চিন্তা ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রকাশ করলে আপনি ঝুঁকির সম্মুখিন হবেন, ওই বার্তাটিই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।”
পাঁচ বছর আগে সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নাম বদলের সঙ্গে আইনের অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হলেও এর অপপ্রয়োগের অভিযোগ ছিল। কারণ পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিতর্কিত বিভিন্ন ধারায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেসব ধারা নিয়ে বেশি বিতর্ক ছিল, কয়েকটি ক্ষেত্রে সেগুলোর সাজা কমিয়ে আনা হয়েছে। যেমন ‘জামিন অযোগ্য’ কয়েকটি ধারাকে করা হয়েছে ‘জামিন যোগ্য’।
মানহানি মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে রাখা হচ্ছে শুধু জরিমানার বিধান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কমানো হচ্ছে সাজা। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে দ্বিগুণ সাজার বিধান ছিল, নতুন আইনে দ্বিতীয়বার সাজার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে।
সাইবার সিকিউরিটি আইনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ কমানোয় সরকারকে সাধুবাদ জানান ইফতেখারুজ্জামান। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের দুর্বলতাগুলো এ আইনে রয়ে গেছে বলেও তিনি মনে করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “দুর্বলতা বললে কম হয়ে যায়, অর্থাৎ যেসব কারণে আমাদের উদ্বেগ ছিল আগের আইনে, নতুন খসড়াতেও সেগুলো রয়ে গেছে।
“মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, বিবেক-চিন্তার স্বাধীনতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করার মত উপাদানগুলো যেগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ছিল, সেগুলো বাস্তবে এই সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মধ্যে স্পষ্টভাবে সন্নিবেশিত রয়েছে।”
নতুন আইনটি ‘কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যেখানে সংবিধানে অধিকার হিসেবে অঙ্গীকার করা আছে, সেখানে এটিকে আমরা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার একটি জায়গায় চলে যাচ্ছি। কিন্তু এটি হতে পারে না। আইনটি যে পর্যায়ে আছে, সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের সাথে আলোচনা করে এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে চর্চা, সেই আলোকে এ আইনটি ঢেলে সাজানোর জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।
মত প্রকাশের নামে যদি অন্য কারও অধিকার হরণ করা হয়, তার বিচার প্রচলিত আইনে করার তাগিদ দিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কারও যদি মানহানি হয়, সেটার জন্য কিন্তু অন্য আইন আছে, প্রচলিত আইন আছে। আইনে সেটার বিচার হবে। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি আইনে সেটার বিচার নির্ধারিত করার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
“সংবাদকর্মী যদি তার স্বাধীনতার কোনো অপব্যবহার করেন, সেই জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সুনির্দিষ্ট আইনের প্রতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া রয়েছে।”
পুরনো খবর