“মানহানির অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, জরিমানা এক টাকাও হতে পারে,” বলছেন আইনমন্ত্রী।
Published : 11 Aug 2023, 12:34 AM
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘জামিন অযোগ্য’ হিসাবে বিবেচিত কিছু ধারাকে ‘জামিনযোগ্য’ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে। সেই সঙ্গে পুনঃঅপরাধের শাস্তির বিধানও বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন আইনে।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদনের পর বুধবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ওয়েবসাইটে খসড়া আইনটি প্রকাশ করা হয়েছে নাগরিক ও অংশীজনদের মতামতের জন্য।
দুই আইন মিলিয়ে দেখা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ), ২০, ২৫, ২৯ ও ৪৭ এর উপ-ধারা (৩) এর অপরাধসমূহ ‘অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য’ ছিল। প্রস্তাবিত আইনের এগুলোর সঙ্গে ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৮, ৩১ ও ৩২ ধারাকেও ‘জামিনযোগ্য’ করা হয়েছে।
আগের আইনে ৩৪ নম্বরে ধারায় থাকা হ্যাকিংয়ের শাস্তির বিধান নতুন আইনে ৩৩ নম্বরে এসে ‘অজামিনযোগ্য’ই থাকছে।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা হিসাবে চিহ্নিত ৩৩ ধারা বাতিলের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে মানহানির বিধানেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
অন্যদিকে, জামিনযোগ্য হিসাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা ৪৭ থেকে বর্তমান আইনে ৪৬ নম্বরে উঠে আসা বিধান জামিনযোগ্যই থাকছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে জামিনযোগ্য ধারা আরও বাড়তে পারে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আভাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব ধারায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং এ নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর সাজা সাইবার নিরাপত্তা আইনে কমিয়ে আনা হয়েছে।
“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশ কিছু ধারা জামিন অযোগ্য ছিল, সেগুলোকে নতুন আইনে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। যেটা জামিনযোগ্য করা হয়েছে, সেগুলো জামিনযোগ্য থাকবে, আর এটির সঙ্গে অন্য কিছু ধারা যোগ হতে পারে, সেটারও সম্ভাবনা আছে।”
দুই আইনের ভিন্নতা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় থাকা কারাদণ্ড বাদ দিয়ে নতুন আইনে কেবল জরিমানা এবং ২১ ধারায় ১০ বছরের জেল থেকে সাত বছর করা হয়েছে।
“সকল ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে যে উপধারাগুলো ছিল, সেটাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।”
নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা চলবে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এই আইনজীবী বলেন, “অবশ্যই আমি এখন এই বক্তব্য দিব না ওই মামলা চলার বা না চলার ব্যবস্থায় নিয়ে। কারণ হচ্ছে এটা আমি যদি এখন বলি, অনেক মামলা তদন্তাধীন আছে আর কোর্টে আছে- এগুলো সব সাবজুডিস। আপনারা জানেন, আমি সাবজুডিসের ব্যাপারে কথা বলি না।”
সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আগের আইনে মামলা চললেও শাস্তির ক্ষেত্রে নতুন আইনের বিধান চলার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবার বিতর্কে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কতটা বদলাচ্ছে?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র
আনিসুল হক বলেন, “এটা একটা জিনিস পরিষ্কার করতে চাই। আইনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আমাদের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, অপরাধ যখন করা হয়েছে তখন যেই আইন ছিল, সেই আইনে তাকে সাজা দিতে হবে। কিন্তু এখানে একটা জিনিস বলব, অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যে পরবর্তী নতুন আইনে যদি সাজা বৃদ্ধি করা হয়, সেই সাজা বৃদ্ধিটা তার উপর পড়বে না। তার কারণ হচ্ছে, তাকে ওই পুরোনো আইনে সাজা দেওয়া হবে।
“আর নতুন আইনে যদি সাজা কমানো হয়, সেটা ব্যবহার করা যাবে না, এই রকম কিন্তু সংবিধানে বাধা নাই। আমরা সেজন্য চিন্তা বিবেচনা করব যে যেসব মামলাগুলি করা হয়েছে, সেখানে যদি দোষী সাব্যস্ত কেউ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে যেন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে শাস্তি তা না দিয়ে, যেহেতু সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে বহু দফায় এই সাজা কমানো হয়েছে, সেই লিমিটটা যেন বিজ্ঞ আদালত বিবেচনা করেন, সেই ব্যাপারেও আমরা পদক্ষেপ নিব।”
মানহানির ধারার বিষয়ে জেল বাদ দিয়ে কেবল জরিমানার বিধান করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে মানহানির অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানা এক টাকাও হতে পারে।
“অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে আদালত এটি নির্ধারণ করবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানহানির মামলার ক্ষেত্রে নতুন আইনে কাউকে সরাসরি গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং গ্রেপ্তারের কোনো আতঙ্ক বা আশঙ্কা থাকবে না। তবে জরিমানা না দিলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি হবে জরিমানা।”