বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবার বিতর্কে

এই আইন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলে প্রতিক্রিয়া এসেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 06:33 PM
Updated : 30 March 2023, 06:33 PM

প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেপ্তার এবং র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু আবারও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে।

বৃহস্পতিবার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন বিতর্কিত এই আইনটি বাতিলের দাবি আবার জোরেশোরে তুলেছেন। বিভিন্ন সংগঠন রাজপথেও প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।

তারা বলছেন, এই আইনটি যে ‘কণ্ঠরোধের হাতিয়ার’ করছে সরকার, শামস ও জেসমিনের ঘটনা সেটাই নতুন করে তুলে ধরল।

তবে আইনটি অপব্যবহারের অভিযোগ আগের মতোই প্রত্যাখ্যান করেছেন ক্ষমতাসীনরা। দুই-একটি ক্ষেত্রে অপব্যবহার হলেও সেসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনটির পক্ষে কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও।

দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালে কারাগারে মারা যাওয়ার পর ওই আইন বাতিলের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল।

এরপর আইনের ‘অপব্যবহার’ বন্ধে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসের মধ্যেও সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার থেমে থাকেনি। সর্বশেষ ঘটল প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস এবং নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মী সুলতানা জেসমিনকে নিয়ে।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে।

আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২৪ মার্চ সেখানে তার মৃত্যু হয়।

জেসমিনকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন যুগ্মসচিব এনামুল।

সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ওই পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে ২৯ মার্চ ভোররাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন সরকার সমর্থক যুব সংগঠন যুবলীগের এক নেতা। পরে একই আইনে আরেকটি মামলায় হয়, সেখানে শামসের পাশাপাশি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়।

Also Read: জেসমিনকে গ্রেপ্তারে ‘আইনের ব্যত্যয়’ দেখছে আসক

Also Read: যুবলীগ নেতার মামলা সিআইডিতে, সাংবাদিক শামস কোথায়?

Also Read: জামিন নাকচ, সাংবাদিক শামস কারাগারে

জেসমিনের মৃত্যুর পর আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন যেসব বিবৃতি দিয়েছিল, সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথাও ছিল। শামস গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বিবৃতির ভাষা আরও কড়া হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে বিক্ষোভ। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।

সিপিজে-রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-আর্টিকেল নাইনটিনের বিবৃতি

সাংবাদিক শামসের নিঃশর্ত মুক্তির পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানি বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নানা সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো অভিযোগ করা হলে কোনো সাংবাদিককে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে না। কিন্তু মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও এই আইনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের ‘নিপীড়নের শিকার’ হতে হচ্ছে।

নিউ ইয়র্কে সিপিজে’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক শামসকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির মতো প্রতিক্রিয়া ভীতির সঞ্চার করছে। অবিলম্বে শামসকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।”

সমালোচকদের ‘কণ্ঠ রোধ করতে’ বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন কার্লোস।

প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে কোনো সমালোচনার জন্য গণমাধ্যমের উপর খড়গ চালানো বাংলাদেশের সরকারকে বন্ধ করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে বলেও সরকারকে সতর্ক করেছে সংগঠনটি।

মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল এক বিবৃতিতে বলেন, “মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এ মামলা এ আইনকে সাংবাদিক এবং গণ মাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার একটি প্রত্যক্ষ উদাহরণ। এটি দেশের মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য হুমকি ও ভয়ের স্পষ্ট সংকেত।”

এই আইনে হয়রানি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শামসকে আটকসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের’ সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে ১২ দেশের জোট ‘মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন’ (এমএফসি)।

দেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভ

টিআইবি: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, শামসকে ধরে নেওয়ার ঘটনাটি একজন সাংবাদিক, দেশের একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকারই কেবল ক্ষুণ্ন করেনি, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের এবং প্রয়োজনে ‘শায়েস্তা করার ভয়ঙ্কর উদাহরণ’ তৈরি করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “প্রেস কাউন্সিল আইনকে উপেক্ষা করে সরাসরি কোনো প্রতিবেদককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অ-জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং সমালোচনামূলক বা ভিন্নমত প্রকাশ করলে শায়েস্তা করার সরকারি অভিপ্রায়কে স্পষ্ট করে তোলে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের নামান্তর।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভিন্নমত পোষণকারী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, বিশেষ করে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র দিনদিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
বিবৃতিতে ৪১ নাগরিক

আইন ও সালিশ কেন্দ্র: ডিজিটার নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান এক বিবৃতিতে বলেন, “এর আগে আইনমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ নেতারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা গ্রহণের পূর্বে বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং উচ্চপদস্থ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রথম আলো ও প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে নানা মন্তব্য এ ধরনের মামলা করতে অতিউৎসাহীদের অনুপ্রাণিত করছে বলে মনে হচ্ছে।”

বিবৃতিতে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসের মুক্তির পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।

ব্লাস্ট: বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) গভীর রাতে সাংবাদিক শামসকে ‘বেআইনিভাবে’ গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বেআইনি আটক ও হয়রানি বন্ধ, গ্রেপ্তার ও রিমান্ড সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি। সংগঠনের সভাপতি মো. ইয়াহিয়া ও সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ইতোমধ্যে মানবাধিকার, তথ্য অধিকার, সাংবাদিকতাসহ বাক স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।” বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রণয়নের পর পরই সংবাদ সম্মেলন করে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এই আইনের ভয়াবহ কুফল সম্পর্কে দেশবাসী এবং সরকারকে সতর্ক করেছিল। বিভিন্ন সময় মামলা হলে প্রতিবাদও জানিয়েছিল। কিন্তু আইনের অপব্যবহার করে সাংবাদিক ও নাগরিক নির্যাতনের ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।”

মহিলা পরিষদ: মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধানের প্রদত্ত বাক ও মত প্রকাশের অধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সংবিধানের আলোকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং সংবাদকর্মী, মানবাধিকারকর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

৪১ নাগরিক: আনু ‍মুহাম্মদ, শহিদুল আলমসহ ৪১ নাগরিক এক যৌথ বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, “এই আইনের প্রয়োগ করে এভাবে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করার ফলে দেশে মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠরোধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে।

“সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছি, সাংবাদিক নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে এই আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ চলছে। ভিন্নমত দমন ও সমালোচনার সীমারেখা এতটাই টেনে দেওয়া হয়েছে যে, এখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র দিনদিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।”

বাম জোটের বিক্ষোভ

সাংবাদিক শামসের মুক্তি, সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিক্ষোভ থেকে র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবিও জানানো হয়।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন ‘হাস্যকর বিষয়’। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাই তদন্ত করলে তাতে নিরপেক্ষতা আশা করা যায় না।

দেশের মানুষ সংকটে রয়েছে দাবি করে গবেষণা সংস্থা সানেমের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বাম জোট নেতারা বলেন, তাহলে তো সানেমের বিরুদ্ধেও মামলা করতে হবে, মামলা করতে হবে ১৮ কোটি মানুষের নামেই।

সমাবেশ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।

যা বলছেন মন্ত্রীরা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে বারবারই আশ্বাস দিয়ে আসছেন আনিসুল হকসহ অন্য মন্ত্রীরা।

গত ১৪ মার্চ আইনটি নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা শেষে আনিসুল হক বলেছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) সমস্যা দূরীকরণে আলোচনা চলছে।

“আইনটি যাতে আরও ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যাতে দূর করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিএসএ’র যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ আইনের কোনটা পরিবর্তন দরকার এবং কোনটা সঠিক, পুনরায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

Also Read: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ

জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বৃহস্পতিবার আনিসুল হক বলেন, “যখন তাকে ধরা হয়, তখন তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের আগে তার মৃত্যু হয়েছে। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো দোষ দেখছি না।”

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে সমগ্র দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, সাংবাদিকদেরও ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে অনেক সাংবাদিকও মামলা করেছে। কদিন আগে একজন নারী সাংবাদিক বিদেশ থেকে চরিত্র হননের দায়ে আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।”

অন্যান্য দেশেও একই ধরনের আইনের উদাহরণ দিয়ে হাছান বলেন, “এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাইবার সিকিউরিটি ল’জ অ্যান্ড রেগুলেশন ২০২২ ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ অ্যান্ড পানিশমেন্টসহ এ ধরনের আইন বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদণ্ড, এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে সেই ডিজিটাল অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আমাদের দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি কঠিন।”