এই আইনটি ‘গণতন্ত্র-মানুষের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’ বলেও ভাষ্য ফখরুলের।
Published : 08 Aug 2023, 03:21 PM
সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে `জনগণের সঙ্গে প্রতারণা’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসব করে মানুষকে ‘বোকা’ বানানো হচ্ছে মন্তব্য করে ওই আইন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ফখরুলের ভাষায়, আইনটি ‘গণতন্ত্র-মানুষের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’।
তিনি বলেন, “বিএনপি মনে করে এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নাম পরিবর্তন করে নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করার নামান্তর। তারা এটার নাম পরিবর্তন করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
“আমরা আবারও বলছি, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সম্পূর্ণ বাতিল চাই। এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আইন, মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে আইন, মিডিয়ার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আইন… এটা রাখার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।”
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব কথা বলছিলেন।
পাঁচ বছর আগে সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নাম বদলের সঙ্গে আইনের অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল। কারণ পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিতর্কিত বিভিন্ন ধারায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেসব ধারা নিয়ে বেশি বিতর্ক ছিল, কয়েকটি ক্ষেত্রে সেগুলোর সাজা কমিয়ে আনা হয়েছে। যেমন ‘জামিন অযোগ্য’ কয়েকটি ধারাকে করা হয়েছে ‘জামিন যোগ্য’।
মানহানি মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে রাখা হচ্ছে শুধু জরিমানার বিধান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কমানো হচ্ছে সাজা। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে দ্বিগুণ সাজার বিধান ছিল, নতুন আইনে দ্বিতীয়বার সাজার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে।
‘মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা’
গত ৭ অগাস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এদিন সম্মেলন ডাকেন ফখরুল।
আইনের নাম বদলের সরকারি সিদ্ধান্তকে তিনি দেখছেন মানুষকে ‘বোকা বানানোর চেষ্টা’ হিসেবে।
তিনি বলেন, “এগুলো হচ্ছে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা ও বিদেশিদের একটা প্রচণ্ড চাপ আছে, আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে… তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা আরকি। এটা হচ্ছে, খুব ঝড়ের মধ্যে একটা উট পাখি মাথা গুঁজে থাকে..। ওরা ভাবছে এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে খুব বুদ্ধিমানের কাজ করছে।
“তারা মানুষকে বোকা ভাবে। এটা কিন্তু ঠিক না। এটাতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, তাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে একই কায়দায় তারা করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের পুরো বিষয়টা আমরা এখনো পাইনি। আমরা দেখতে চাই যে, কী এসেছে তা দেখে গণমাধ্যমে সামনে পরবর্তিতে কথা বলব। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুরো বাতিলের দাবি রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুরোপুরি বাতিল চেয়েছি। এটা নিয়ে কথা বলেছি, বাতিলে দাবি জানিয়েছি, সেমিনার করেছি।
“এই আইনটা সবচাইতে নিকৃষ্ট কালো আইন স্বাধীনতার জন্যে, গণতন্ত্রের জন্যে। এই আইন কোনো মতেই থাকা উচিত না, আমরা বাতিল চাই।”
আরও পড়ুন