বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে দুপুর পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি কম হলেও বিকালের ভাগে ভোটার বাড়বে বলে আশা করছেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম।
Published : 08 May 2024, 02:27 PM
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টির মধ্যে পথম চার ঘণ্টায় গড়ে ১৫-২০% ভোট পড়েছে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, দিনের প্রথম ভাগে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর ভোটার বাড়ছে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোট শুরু হয়; চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরমধ্যে ২২টিতে ইভিএমে ভোট হচ্ছে; বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের পরিস্থিতি তদারকি করছে আইন শৃঙ্খলা মনিটরিং সেল।
বেলা ১টার দিকে নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে এসে ইসি সচিব বলেন, “গড়ে কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না হলেও আমরা প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি, গড়ে অঞ্চলভিত্তিক ১৫% থেকে ২০% ভোট কাস্ট হয়েছে বেলা ১২টা পর্যন্ত।”
তিনি বলেন, “সকাল ১০টায় ও বেলা ১২টায় মাঠ পর্যায়ের তথ্য নেওয়া হয়েছে। একেক জেলায় একেক রকম ভোটের হার। প্রিসাইডিং অফিসার এ সময়ে যে তথ্য অ্যাপে আপলোড দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে প্রাথমিক হারটা জানানো হল। সঠিক হার পরে জানানো সম্ভব হবে।”
দুপুর পর্যন্ত ভোটের পরিস্থিতি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, “শুধু খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার একটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ রয়েছে। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা হলেও কোনো ধরনের বড় গোলযোগ, সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে।
“আল্লাহর অশেষ রহমতে, আপনাদের দোয়ায় ও জনগণের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বলতে পারি-ভোট নির্বিঘ্নে চলমান রয়েছে।”
ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার বিষয়ে সচিব বলেন, “সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, চরাঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে; রাতে কিছু জায়গায় ঝড়ো হাওয়া ও সকালে বৃষ্টি হওয়ায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমরা যেরকম প্রত্যাশা করেছি, তার চেয়ে হয়ত ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে।
“বাংলাদেশে আমরা দেখেছি দুপুর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়ে, ভোটের হার বেড়ে যায়। কারণ যারা মাঠে কাজ করে, তারা বিকালে ভোট দিতে আসে। ভোট শেষে একটা চিত্র দিতে পারব- ভোটের হার কেমন।”
ব্যালটের পাশাপাশি ইভিএমে কোনো ধরনের ত্রুটি ছাড়াই ভোট হচ্ছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীরা রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করেছে। ইভিএম নিয়ে কোথাও ঝামেলা হয়নি। যথাসময়ে ভোট শুরু হয়েছে।”
‘বড় ধরনের’ গোলযোগ কোথাও ঘটেনি জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, “দুয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেখানে ঘটেছে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার একটি কেন্দ্রের বাইরে গোলযোগের কারণে কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়। এর বাইরে কোথাও ভোট বন্ধ করা হয়নি। বগুড়া জেলার একটি ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে ভোট দিতে সহয়তা করায় একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, আরও দুয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রের বাইলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তবে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মাদারীপুরেও কেন্দ্রের বাইরে ঝামেলা হয়েছে, দকে ভোট নিতে বাধা হয়নি।
• বুধবার সকাল ৮টায় নির্ধারিত সময়েই ১৩৯ উপজেলার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কেন্দ্রে ভোট শুরু হয়েছে, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
• এই ধাপে ভোটার আছেন ৩ কোটি ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ১০২ জন। মোট ১ হাজার ৬১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে তারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
• ১৩৯ উপজেলার মধ্যে ২২টিতে ইভিএমে ও বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোট চলছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করে চার মাসের মাথায় দেশজুড়ে উপজেলার এ ভোট হচ্ছে। এ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য 'সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে' জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটে প্রভাব বিস্তার রোধে 'সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে'।
উপজেলা নির্বাচন: প্রথম দুই ঘণ্টায় গড়ে ৭-৮% ভোট পড়েছে, ধারণা ইসির
আওয়ামী লীগ নির্বাচন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ দেখানোর কৌশলে উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক দেয়নি। ফলে এ নির্বাচনে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই, যদিও প্রার্থীদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা, তারা ভোট করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। বিএনপি এ নির্বাচনও বর্জন করছে।
সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১% এর বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে ৬১% এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭.৬৯% ভোট পড়ে।
১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন ছয়টি ধাপে ও ২০১৯ সালে পাঁচ ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের ভোট হয়।