নতুন দুটি দলের নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে, যার নেতাদের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা ছিল।
Published : 27 Oct 2022, 12:37 AM
দলের গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন, এই দলটি থেকে ছুটে আসাদের দুটি নতুন দল গড়ে নিবন্ধন চাওয়ার প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, গঠনতন্ত্র সংবিধান পরিপন্থি হলে এই দলগুলোও নিবন্ধনের সুযোগ পাবে না।
এই নির্বাচন কমিশনার এর আগে বলেছিলেন, জামায়াত ভিন্ন নামে ইসির নিবন্ধন চাইলেও পাবে না। তবে বুধবার তার বক্তব্যে কিছুটা ভিন্নতা এল।
এদিন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্বাচনে ভবনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন আলমগীর।
বিডিপির নেতাদের মধ্যে অনেকে জামায়াতে ইসলামীতে যুক্ত বলে খবর বেরিয়েছে। আবার সম্প্রতি নিবন্ধন পেতে আবেদন করে এবি পার্টি নামে আরেকটি দল, যে দলের নেতৃত্বে রয়েছেন জামায়াতে পদধারী সাবেক নেতারা।
বাংলাদেশে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন থাকতে হয়।
২০০৮ সালে নিবন্ধনের নিয়ম চালু হওয়ার পর জামায়াতও নিবন্ধন পেয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এই দলটির গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৩ সালে আদালত রায় দিলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
ফলে জামায়াত এখন নিজেদের দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারছে না। তার মধ্যেই নতুন দুটি দলের নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়ল, যার নেতাদের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এ বিষয়ে আলমগীর বলেন, “জামায়াত হিসেবে আসার সুযোগ নাই। মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের চেতনার বাইরে যদি কোনো দলের চেতনা থাকে গঠতন্ত্রে, তাহলে তাকে নিবন্ধন দেওয়ার তো কোনো সুযোগই নেই।
“যে-ই আসবে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস থাকতে হবে; তাকে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় ও সংবিধানের চেতনায় সম্মান থাকতে হবে।”
ভিন্ন নামেও জামায়াতের নিবন্ধনের সুযোগ নেই: আলমগীর
নাম পাল্টাল, কিন্তু ব্যক্তি একই থাকল, তাহলে নিবন্ধন পাবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখন যদি কেউ আসে, আমাদের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, যদি কেউ যুদ্ধাপরাধী না থাকে এবং নিবন্ধনের সব শর্ত যদি পূরণ করে, তাহলে তো আর বলতে পারছেন না যে ওই জামায়াত, এই জামায়াত এক।
“ওখানে (আইনে) তো বলা আছে কে কে নিবন্ধন পাবে না। যেমন কেউ যদি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, দেখা গেল গঠণতন্ত্রে এমন একটা ধারা আছে, উদ্দেশ্য আছে; যা আমাদের সংবিধানের সঙ্গে ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সাংঘর্ষিক, তাহলে তো পাবেন না।”
জামায়াতের কেউ এসে অন্য নামে নিবন্ধন চাইলে তাহলে পাবেন কি না- এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, “দেখতে হবে উনি যুদ্ধাপারধী ছিলেন কি না, মামলা আছে কি না, যে যে শর্ত আছে, সেগুলোর মধ্যে যদি একজনও পড়ে, তাহলে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই।
“যদি বলে যে নারী নেতৃত্ব থাকবে না, তাহলে কি দেওয়ার সুযোগ আছে? কারণ বলাই তো আছে, সংবিধানেও বলা আছে নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য করা যাবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাজনৈতিক বৈষম্য করা যাবে না। এসব থাকলে নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।”
নিবন্ধন বাতিল হওয়া ফ্রিডম পার্টির নেতারা কি নতুন দল হয়ে নিবন্ধন পেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফ্রিডম পার্টিতে যারা আছে, তারা তো বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, তারা তো পলাতক, তাদের তো রাজনীতি করারই কোনো অধিকার নাই। নিবন্ধন কেমনে পাবে?”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে আগ্রহী অন্তত দুই ডজন নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। আগামী রোববার পযন্ত আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
আলমগীর বলেন, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে যে যে শর্তগুলো পূরণ করা প্রয়োজন, সেগুলো পূরণ করলে নিবন্ধন পাবে। শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে পাবে না।
নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়।