মিলার বলেন, ২০২৪ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বাঁক বদলের মুহূর্ত’। তাই এ দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্যটাও অন্যরকম।
Published : 10 Dec 2024, 06:18 PM
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আঁকা দেয়ালিকা ও গ্রাফিতির একটি গ্রন্থনা সামনে এনেছে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার মঙ্গলবার গুলশানে নিজ বাসভবনে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ‘৩৬ জুলাই-২০২৪’ শিরোনামের বাইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
তিনি বলেন, মানবাধিকারের সুরক্ষা, গণতন্ত্রের উৎকর্ষ সাধন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল লক্ষ্য। ইইউর সব নীতি তৎপরতা এ বিষয়গুলোকে ঘিরে।
“মানবাধিকার বিমূর্ত কিছু নয়; এটি সদা দৃশ্যমান এবং উপলব্ধি করার বিষয়। এটি আমাদের একসঙ্গে বসবাসের অবলম্বন এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের বোঝাপড়ার উপায়। একমাত্র মানবাধিকারই আমাদের আত্মমর্যাদা ও সব মানুষকে নিয়ে এক সঙ্গে চলার রক্ষাকবচ। শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে মানবাধিকার।”
মিলার বলেন, ২০২৪ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বাঁক বদলের মুহূর্ত’। তাই এ দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্যটাও অন্যরকম।
“বিশেষ করে যেসব পরিবারের দেড় হাজারের মত স্বজন আত্মহুতি দিয়েছে, যেসব পরিবারের হাজার হাজার সদস্য আহত হয়েছে, তাদের জন্য এবারের মানবাধিকার দিবস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একটি অন্তর্বর্তীকালীন মুহূর্ত অতিক্রম করা বাংলাদেশের জন্যও এবারের মানবাধিকার দিবস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।“
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের চারপাশের দেয়ালগুলোতে যেসব শিল্পকর্ম অঙ্কিত রয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘বাংলাদেশ ৩৬ জুলাই-২০২৪’ শিরোনামের প্রকাশনায় যেসব চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে, তা বিক্ষোভ-প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো ধারণ করে আছে। ঢাকার দেয়ালগুলোর জ্বলন্ত ক্যানভাস আমাদের প্রকাশনায় তুলে এনেছি।
“দমনপীড়নের ভয়াবহতা এবং নতুন দেশের আকাঙ্ক্ষা, অনেক ট্র্যাজেডি, গৌরব, ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা সেখানে স্থান পেয়েছে। নিদৃষ্ট সময় ও স্থানকে কেন্দ্র করে তৈরি করা প্রতীকগুলো সারাবিশ্বের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আছে। প্রতিবাদের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বৈষম্যহীন সমাজ, নিপীড়নবিরোধী অবস্থান, বেঁচে থাকা ও আইনের শাসনের অধিকার প্রকাশ পেয়েছে এসব চিত্রকর্মে।”
লামিয়া মোরশেদ বলেন, “আজকের এই আয়োজন মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ মূল্যবোধকে সামনে নিয়ে আসছে। আত্মমর্যাদা, ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠাই মানবাধিকারের মূলনীতি। জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ জনগণের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে সামনে নিয়ে আসে। তাদের সেই আত্মত্যাগকে সম্মান জানানো আমাদের সবার দায়িত্ব।
ঢাকার শত শত দেয়ালে গ্রাফিতি ও চিত্রকর্ম অঙ্কনে যুক্ত নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাসফিয়া আক্তার পাপিয়া ও চিত্রশিল্প সাইয়েদা মাইশা ফারজানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তাসফিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক চেতনা থেকে তিনি এই আন্দোলনে যুক্ত হননি।
“যখন দেখলাম রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার প্রতিবাদে আমরা শিল্পের তুলি নিয়ে সোচ্চার হয়েছি। যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা গেছি, তা যেন আর ফিরে না আসে, মানুষ যেন স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে, এটাই আমাদের চাওয়া।”